কোলোরেক্টাল ক্যান্সার বা কোলন ও রেক্টাম ক্যান্সার বর্তমানে একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ক্যান্সার সম্পর্কিত মৃত্যুর এটি তৃতীয় প্রধান কারণ। প্রতি বছর এখানে লক্ষাধিক মানুষের এই রোগ ধরা পড়ে এবং এর শিকার হয়ে বহু মানুষ প্রাণ হারান।
উদ্বেগের বিষয় হলো, শুধু বয়স্ক ব্যক্তিরাই নন, তরুণদের মধ্যেও এই ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়ছে। আমাদের দেশেও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে, তাই এর কারণ, প্রতিরোধ এবং স্ক্রিনিং সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।
কোলন ক্যান্সার আসলে কী? আমাদের পরিপাকতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কোলন বা বৃহদন্ত্র এবং মলাশয় বা রেক্টাম। যখন এই অঙ্গগুলোতে ক্যান্সার হয়, তখন তাকে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার বলা হয়। ক্যান্সার কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধিতে টিউমার তৈরি হয় এবং এটি শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কাদের বেশি? জীবনযাত্রার ধরনের সঙ্গে এই ক্যান্সারের যোগসূত্র রয়েছে। অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা, ডায়াবেটিস, ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান এবং বেশি পরিমাণে লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করা এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে এটি বংশগত কারণেও হতে পারে। যাদের পরিবারে এই রোগের ইতিহাস আছে, তাদের ঝুঁকি বেশি। যাদের ‘ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ’ (যেমন – ক্রোনস ডিজিজ বা আলসারেটিভ কোলাইটিস) আছে, তাদেরও এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পেটের অঞ্চলে রেডিয়েশন থেরাপি নিলেও ঝুঁকি বাড়ে।
তরুণদের মধ্যে কেন বাড়ছে এই ক্যান্সার? সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, অল্পবয়সীদের মধ্যে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। এর সঠিক কারণ এখনো অজানা, তবে খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং পরিবেশগত কিছু বিষয় এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি আসক্তি, শারীরিক কার্যকলাপের অভাব এবং অতিরিক্ত ওজন—এগুলো সবই ঝুঁকির কারণ।
চিকিৎসা পদ্ধতি: কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সারের পর্যায় এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর। সাধারণত অস্ত্রোপচার করা হয়। এর সঙ্গে রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি এবং কিছু ক্ষেত্রে ইমিউনোথেরাপিও দেওয়া হয়।
ক্যান্সার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, অর্থাৎ শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যাওয়ার আগেই চিকিৎসা শুরু করা যায়, তবে রোগীকে সুস্থ করে তোলার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কখন এবং কীভাবে স্ক্রিনিং করাবেন? কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য স্ক্রিনিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, যাদের ঝুঁকি বেশি নয়, তাদের ক্ষেত্রে ৪৫ বছর বয়স থেকে স্ক্রিনিং শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
যাদের পারিবারিক ইতিহাস আছে বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে আগে থেকেই স্ক্রিনিং শুরু করা উচিত।
ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা রয়েছে:
ঝুঁকি কমাতে করণীয়: কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে হলে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করতে হবে। স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে হবে। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ করতে হবে।
খাদ্যতালিকায় আরও বেশি ফল, সবজি, শস্য এবং ফাইবার যোগ করতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার ও লাল মাংসের পরিমাণ কমাতে হবে।
সচেতনতা ও প্রতিরোধ: কোলোরেক্টাল ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ, তবে সচেতনতা এবং প্রতিরোধের মাধ্যমে এর ঝুঁকি কমানো সম্ভব। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। আমাদের দেশেও কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং স্ক্রিনিংয়ের সুযোগ আরও সহজলভ্য করা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন