যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর শহরের একটি সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনার এক বছর পর, দেশটির পরিবহন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা দেশটির আরও ৬৮টি সেতুর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কর্মকর্তাদের মতে, এই সেতুগুলোর নৌ-দুর্ঘটনার ঝুঁকি যাচাই করা প্রয়োজন।
গত বছর ২৬শে মার্চ, কন্টেইনার জাহাজ ‘ডালি’ বাল্টিমোর বন্দরের বাইরে যাওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ‘ফ্রান্সিস স্কট কী’ সেতুর একটি স্তম্ভে ধাক্কা মারে। এতে সেতুটি ভেঙে পড়ে এবং ছয়জন নির্মাণ শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (NTSB) তাদের তদন্তে দেখেছে যে, দুর্ঘটনার আগে জাহাজে দুটি বড় ধরনের বৈদ্যুতিক গোলযোগ দেখা দিয়েছিল। তারা আরও জানায়, আমেরিকান এসোসিয়েশন অফ স্টেট হাইওয়ে অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন অফিশিয়ালস (AASHTO)-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, কী ব্রিজের ঝুঁকির মাত্রা গ্রহণযোগ্য সীমার চেয়ে বেশি ছিল।
মেরিল্যান্ড পরিবহন কর্তৃপক্ষ (MDTA), যারা সেতুটির মালিক, যদি AASHTO-এর পরামর্শ অনুযায়ী ঝুঁকির মূল্যায়ন করত, তাহলে তারা বুঝতে পারত যে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এবং সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে ব্যবস্থা নিতে পারত।
NTSB-এর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সালের আগে নির্মিত এবং বড় জাহাজের আনাগোনা আছে এমন আরও ৬৮টি সেতু চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলোর ঝুঁকির মূল্যায়ন করা হয়নি। এই সেতুগুলোর মালিকদের প্রতি NTSB-এর পরামর্শ হলো, তারা যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সেতুর ঝুঁকি যাচাই করে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
NTSB-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে এই ৬৮টি সেতু ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে, কর্তৃপক্ষ জাহাজ চলাচলের এই ধরনের রুটে থাকা সেতুগুলোর নিরাপত্তা মূল্যায়ন করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছে।
একইসঙ্গে, ফেডারেল হাইওয়ে প্রশাসন, ইউএস কোস্ট গার্ড এবং ইউএস আর্মি কর্পস অফ ইঞ্জিনিয়ার্সকে একটি দল গঠন করে সেতু মালিকদের সহায়তা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে, দুর্ঘটনার প্রায় এক বছর হতে চললেও, ডালি জাহাজের আটজন ক্রু সদস্য, যাদের মধ্যে জাহাজের শীর্ষ কর্মকর্তারাও রয়েছেন, এখনো বাল্টিমোরে অবস্থান করছেন। ফেডারেল এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের সেখানে থাকতে হবে।
যদিও এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি, তবে তদন্তকারীরা দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন।
এর আগে, সিএনএন জানিয়েছিল, এফবিআই এবং কোস্ট গার্ড তদন্ত করছে যে জাহাজের ক্রুরা বন্দরে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিষয়ে কোনো তথ্য গোপন করেছিল কিনা। গত অক্টোবরে, জাহাজের মালিক সিঙ্গাপুরের গ্রেস ওশেন প্রাইভেট লিমিটেড এবং ব্যবস্থাপক সিনার্জি মেরিন পিটিই লিমিটেড যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে।
এই সমঝোতা অনুযায়ী, কোম্পানি দুটি জাহাজের রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলার কারণে সৃষ্ট এই দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ১০২ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১ হাজার ১৩০ কোটি টাকার বেশি) দিতে রাজি হয়েছে।
বিচার বিভাগের কৌঁসুলিরা বলেছিলেন, জাহাজের ত্রুটিপূর্ণ অবকাঠামোর কারণে এই “দুর্ঘটনা সম্পূর্ণরূপে এড়ানো যেত”। তারা আরও অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারে সমস্যা ছিল, যা সারানোর পরিবর্তে কোম্পানিগুলো অস্থায়ী ব্যবস্থা নিয়েছিল।
দুর্ঘটনার রাতে যখন ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে যায়, তখন একটি ব্যাকআপ ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ‘বেপরোয়াভাবে নিষ্ক্রিয়’ করে রাখা হয়েছিল।
এছাড়াও, বাল্টিমোর শহর এবং নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরাও ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বর্তমানে, ডালি জাহাজের মেরামত সম্পন্ন হয়েছে এবং জাহাজটি পুনরায় পরিষেবাতে ফিরে এসেছে।
তথ্য সূত্র: CNN