ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের প্রধানের পদ থেকে রোনেন বারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে।
এক সপ্তাহ আগে নেতানিয়াহু বার-এর ওপর আস্থা হারিয়েছেন বলে জানান। বিক্ষোভকারীরা এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খুব শীঘ্রই রোনেন বারকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। নতুন প্রধান নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত অথবা আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে তিনি দায়িত্ব ছাড়তে পারেন।
উল্লেখ্য, বার-কে এর আগের সরকার, যা ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল, সেই সময় নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
বার এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে সম্পর্ক আগে থেকেই ভালো ছিল না। বিশেষ করে বিচার বিভাগীয় সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়, যা দেশের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছিল।
এছাড়া, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। শিন বেটের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে হামলার প্রতিরোধে তাদের ব্যর্থতা স্বীকার করা হয়।
একইসঙ্গে, এতে বলা হয়, ‘নীরবতার নীতি’ হামাসকে সামরিক শক্তি বাড়াতে সহায়তা করেছে।
শিন বেট-এর ক্ষমতা ব্যাপক। তারা নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধেও জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্ত করছে।
অভিযোগ রয়েছে, তারা বিদেশি গণমাধ্যমে গোপন নথি সরবরাহ করেছেন এবং কাতার থেকে অর্থ গ্রহণ করেছেন, যা হামাসকে আর্থিক সহায়তা দেয়। বর্তমানে নেতানিয়াহু একটি দুর্নীতি মামলার সম্মুখীন, যেখানে তার কারাদণ্ডের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, বরখাস্তের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীরা গাজায় পুনরায় যুদ্ধ শুরুর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছেন। তারা বলছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার ফলে সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় গত কয়েক দিনে অন্তত ৫৯২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এখনো পর্যন্ত প্রায় ৫৯ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছে।
জেরুজালেমে বিক্ষোভকারীরা ‘ইসরায়েল তুরস্ক নয়, ইরানও নয়’ স্লোগান দেয়। তারা নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপকে ইসরায়েলি গণতন্ত্রের জন্য ‘red flag’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
তাদের মতে, বারকে অপসারণের চেষ্টা এবং অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারাভ-মিয়ার পদচ্যুতির প্রচেষ্টা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের আইন বিশেষজ্ঞ ড. আমির ফুকস-এর মতে, নেতানিয়াহু তার ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত করতে এবং সব ‘ gatekeepers’ দের সরিয়ে দিতে চাচ্ছেন, যা ইসরায়েল রাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান