গাজায় স্থল অভিযান চালানোর পর ইসরায়েলের ভূমি দখলের হুমকি।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার গাজার উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি স্থল বাহিনী অভিযান শুরু করে। এর মধ্যেই দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গাজায় ভূমি দখলের হুমকি দিয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, তারা হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান আরও জোরদার করবে। গাজার বাসিন্দাদের দক্ষিণাঞ্চলে সরিয়ে নেওয়া এবং প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজার বাসিন্দাদের জন্য তৈরি করা ‘স্বেচ্ছায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সংবাদ সংস্থা জেরুজালেম পোস্টের বরাত দিয়ে জানা যায়, গ্যালান্ট সেনাবাহিনীকে গাজার আরও কিছু এলাকা দখলের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে গাজার চারপাশের নিরাপত্তা অঞ্চল সম্প্রসারণ এবং ইসরায়েলি জনবসতি ও সৈন্যদের রক্ষার কথাও বলেছেন তিনি।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, গাজা থেকে এখনো জিম্মিদের মুক্তি না দিলে ইসরায়েল গাজার আরও বেশি ভূমি দখল করবে। তিনি বলেন, হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি না হলে ইসরায়েল সেখানে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে আরও বেশি এলাকা নিজেদের দখলে নেবে।
বৃহস্পতিবার রাতে রাফাহ শহরের শাবুরা এলাকা এবং গাজার উত্তরাঞ্চলের বেইত লাহিয়ায় ইসরায়েলি সেনা অভিযান চালায়। এর আগে ইসরায়েল গাজার প্রধান উত্তর-দক্ষিণ সড়ক বন্ধ করে দেয়।
গাজার কেন্দ্রীয় এলাকা থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খৌদারি জানিয়েছেন, বেইত লাহিয়ার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি। সেখানকার বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়ার জন্য কোনো লিফলেট বা অন্য কোনো ধরণের সতর্কতাও জানানো হয়নি। হঠাৎ করেই তারা অবিরাম বিমান হামলা ও গোলাগুলির শিকার হন।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার ইসরায়েল প্রায় দুই মাস ধরে চলা যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেয়। এতে প্রায় ৫৯০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ২০০ জন শিশু।
গাজা শহরের জেইতুন এলাকাতেও শুক্রবার ইসরায়েলি বিমান হামলা হয়েছে। এছাড়া খান ইউনিস শহরের পূর্বে অবস্থিত খুজা ও আবাসন এলাকাতেও হামলার খবর পাওয়া গেছে।
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গাজায় ত্রাণ সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। সংস্থাটির মুখপাত্র স্যাম রোজ জানান, অক্টোবর মাস থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষের পর এই প্রথম এত দীর্ঘ সময় ধরে গাজায় কোনো ত্রাণ প্রবেশ করেনি।
গাজার স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের নতুন করে অভিযানের কারণে তারা এখন চরম চাপের মধ্যে রয়েছেন। আল-জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খৌদারি বলেন, গত ১৮ দিন ধরে গাজায় কোনো ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেনি। এমনকি একটিও মেডিকেল সামগ্রীর ট্রাকও প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। ডাক্তাররা বলছেন, আহতদের বেশিরভাগই গুরুতর এবং তাদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যা বেশি।
গাজায় জ্বালানির অভাব পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে। হিন্দ খৌদারি আরও বলেন, ‘গাজার অধিকাংশ হাসপাতালে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জ্বালানি সরবরাহ না হলে সেগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।’
২রা মার্চ ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়। এর ফলে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা