লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের জেরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বিশ্বজুড়ে। বিমানবন্দরের কাছে একটি বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে আগুন লাগার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এর ফলে, শুক্রবার (স্থানীয় সময়) বিমানবন্দরের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়, যার ফলশ্রুতিতে কয়েক হাজার ফ্লাইট বাতিল হয়েছে এবং কয়েক লক্ষ যাত্রী চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে, বিমানবন্দরের প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে আগুন লাগে। এর ফলে, হিথরোর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
জরুরি বিভাগের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে, শুক্রবার সারাদিন ধরেই দমকল কর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাজ্যের জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী এড মিলিব্যান্ড এই ঘটনাকে ‘বিপর্যয়কর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি জানান অগ্নিকাণ্ডের কারণে বিমানবন্দরের জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, এমনকি ব্যাকআপ জেনারেটরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ব্রিটেনের জাতীয় গ্রিড জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে তাদের সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তারা দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। যদিও শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৬২,০০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়েছে, এখনো প্রায় ৪,৯০০ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছেন।
এই অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো পর্যন্ত অজানা। তবে, মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ওপর এর প্রভাবের কারণে তারা সন্ত্রাস দমন বিভাগের কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
এই ঘটনায় কোনো নাশকতার সম্ভাবনা আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
হিথরোর এই অচলাবস্থার কারণে প্রায় ২ লক্ষ মানুষের ভ্রমণ পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের বিমানবন্দরে যেতে নিষেধ করেছে এবং টিকিটের রি-শিডিউলিংয়ের জন্য এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছে।
উত্তর আমেরিকা এবং এশিয়া থেকে আসা বেশ কয়েকটি দীর্ঘ-পাল্লার ফ্লাইটকে হয় অন্য বিমানবন্দরে অবতরণ করতে হয়েছে, অথবা যাত্রা বাতিল করতে হয়েছে।
অ্যামস্টারডামের শিপোল বিমানবন্দর, আয়ারল্যান্ডের শ্যানন বিমানবন্দর, ফ্রান্সের প্যারিস ও জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে ফ্লাইটগুলো অবতরণ করেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লাইটগুলোর মধ্যে ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটও রয়েছে। বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিমান চলাচল বিষয়ক পরামর্শদাতা অনিতা মেন্ডিরত্তা জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতির কারণে প্রায় ৪,০০০ টন পণ্য আটকা পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনার কারণে যুক্তরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, যেমন— যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষ করে, যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো রাশিয়াকে ইউরোপজুড়ে নাশকতা চালানোর জন্য দায়ী করার প্রেক্ষাপটে এই ঘটনা উদ্বেগের কারণ।
হিথরো বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর। গত বছর এখানে প্রায় ৮ কোটি ৩৬ লক্ষ যাত্রী চলাচল করেছে।
বিমানবন্দরের এই অচলাবস্থা শুধু যুক্তরাজ্য নয়, বিশ্বজুড়ে বিমান চলাচলে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস