যুক্তরাজ্যে ওষুধের সংকট বর্তমানে গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা দেশটির স্বাস্থ্যখাতে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতির প্রধান কারণ হলো ব্রেক্সিট।
ওষুধের সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে মৃগীরোগ এবং সিস্টিক ফাইব্রোসিসের মতো গুরুতর অসুস্থতার চিকিৎসার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, যা রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
নটিংহ্যাম ভিত্তিক স্বাস্থ্য বিষয়ক থিংক ট্যাংক, নুফিল্ড ট্রাস্টের এক নতুন প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্যানুসারে, গত বছর ওষুধ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার ঘটনা ছিল ১,৯৩৮ বার।
এর আগে, ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ১,৯৬৭।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) পর থেকে ওষুধ সরবরাহ এবং আমদানিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্রেক্সিটের কারণে যুক্তরাজ্যের ওষুধ আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর তুলনায়, বিশেষ করে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ওষুধ আমদানির প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে কম।
জাতিসংঘের বাণিজ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১০ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের ওষুধ আমদানির পরিমাণ অন্যান্য জি-৭ দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম।
২০১৬ সালের আগে, অর্থাৎ ব্রেক্সিট গণভোটের আগে, ওষুধের মোট আমদানি মূল্য প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে।
যুক্তরাজ্যের রাজস্ব ও শুল্ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ইইউ থেকে ওষুধ আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, যা ব্রেক্সিটের কারণে নতুন বাণিজ্য barrier তৈরি হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
এছাড়াও, ২০১৬ সালে ইইউ ছাড়ার পর ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইইউ-এর ২৭টি দেশ, নরওয়ে, আইসল্যান্ড এবং লিশটেনস্টাইন) যুক্তরাজ্যের ওষুধ রপ্তানি এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।
জাতীয় ফার্মেসি অ্যাসোসিয়েশন (National Pharmacy Association) ওষুধ সরবরাহের এই সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
তারা জানিয়েছে, তাদের জরিপে অংশ নেওয়া ৫০০টি ফার্মেসির সবাই প্রতিদিন অন্তত একবার রোগীদের ব্যবস্থাপত্র সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে, কারণ প্রয়োজনীয় ওষুধ তাদের কাছে ছিল না।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ফার্মেসিগুলোকে প্রায়ই রোগীদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যখন ওষুধের সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন যুক্তরাজ্য সম্ভবত সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কারণ, ইইউ তাদের নিজস্ব সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাইছে।
যুক্তরাজ্য সরকার অবশ্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে।
তারা দেশে ওষুধ, ডায়াগনস্টিকস এবং চিকিৎসা প্রযুক্তি তৈরির জন্য প্রায় ৫২০ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে।
এছাড়া, তারা স্বাস্থ্যখাতে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমাতে এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সরবরাহ শৃঙ্খল জোরদার করতে কাজ করছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান