ছাত্রাবাসে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, আতঙ্কের রাতে দুই ছাত্রীর জীবন: তদন্তের মোড়।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে ঘটে যাওয়া নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্তম্ভিত বিশ্ব। ২০২২ সালের ১৩ই নভেম্বর, ইদাহো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে একটি বাড়িতে চারজন শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
নিহতদের মধ্যে ছিলেন কায়েলা গনকালভেস, ম্যাডিসন মোগেন, জ়ানা কারনোডল এবং ইথান চ্যাপিন। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ব্রায়ান কোবার্গার নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যিনি অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর ছাত্র ছিলেন। যদিও তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
ভোর রাতের সেই ভয়ংকর ঘটনার সাক্ষী ছিলেন আরও দুইজন শিক্ষার্থী – ডিলান মরটেনসেন এবং বেথানি ফানক। ঘটনার রাতে তারা কিভাবে সেই বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলেন, তা নিয়েই এখন চলছে তদন্ত।
ঘটনার দিন রাতে, নিহত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পার্টি থেকে ফিরে আসেন। গভীর রাতে, সম্ভবত ভোর চারটার দিকে, হঠাৎ করেই শব্দ এবং চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় ডিলান মরটেনসেনের।
তিনি জানান, উপরের তলার ঘর থেকে তিনি কিছু শব্দ শুনতে পান, সম্ভবত কায়েলার কুকুর খেলার শব্দ ছিল সেটি। এর কিছুক্ষণ পরেই তিনি একটি কণ্ঠস্বর শোনেন, যেখানে কেউ বলছিল, “এখানে কেউ আছে।”
এরপর তিনি কান্নার শব্দ শুনতে পান এবং দরজা খুলে দেখেন, কালো পোশাক পরা, মুখ ঢাকা একজন লোক তার দিকে এগিয়ে আসছে। আতঙ্কে জমে গিয়ে তিনি দ্রুত ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন।
এরপর তিনি তার রুমমেটদের ফোন করা শুরু করেন, কিন্তু কারো সঙ্গেই যোগাযোগ করতে পারেননি। এরপর শুরু হয় তাদের মধ্যে টেক্সট চালাচালি।
আতঙ্কের মধ্যে, তারা একে অপরের কাছে জানতে চান আসলে কি ঘটছে। ডিলান মরটেনসেন তার বন্ধুদের কাছে জানতে চান, “কেউ কি উত্তর দিচ্ছে না?” বেথানি ফানক উত্তর দেন, “আমিও খুব ভয় পেয়ে গেছি।”
ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর, প্রায় সকাল ১১টা ৫৬ মিনিটে, বেথানি ফানক জরুরি নম্বরে ফোন করেন। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
পুলিশ এসে পৌঁছানোর পর তারা চারজন শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় খুঁজে পায়।
তদন্তে জানা যায়, ব্রায়ান কোবার্গার নামের এক ব্যক্তি হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। ঘটনার সময়কার বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত এবং ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
তবে, অভিযুক্ত এখনো পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এই ঘটনার তদন্তে, জীবিত দুই ছাত্রীর ভূমিকা এবং ঘটনার সময় তাদের কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনার আট ঘণ্টা পর কেন তারা জরুরি বিভাগে ফোন করেছিলেন, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে।
এই বিষয়ে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে মানুষের মানসিক প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন হতে পারে। আতঙ্ক, ভয় এবং মানসিক আঘাতের কারণে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে অনেক সময় দেরি হতে পারে।
বর্তমানে, এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া চলছে। অভিযুক্ত ব্রায়ান কোবার্গারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে এবং ঘটনার পেছনের আসল কারণ উদ্ঘাটনে তদন্তকারীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই মামলার রায় কি হয়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে আছে সবাই।
তথ্য সূত্র: সিএনএন