যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজ্যে ভোটার আইডি সংক্রান্ত নতুন আইনের কারণে স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে অনেককে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। নিউ হ্যাম্পশায়ারে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনে, নাগরিকত্বের প্রমাণ দেখাতে না পারায় অনেক ভোটার ভোট দিতে পারেননি।
এই ঘটনাগুলো এখন সারা দেশে আলোচনা সৃষ্টি করেছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য রাজ্যেও একই ধরনের আইন প্রণয়নের চিন্তা-ভাবনা চলছে।
নিউ হ্যাম্পশায়ারের মিলফোর্ডে, স্থানীয় বাজেট অনুমোদন, কবরস্থান ট্রাস্টি নির্বাচন এবং নতুন ডাম্প ট্রাক কেনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ভোট দিতে পারেননি অনেক ভোটার। ডারহামে, একজন ১৮ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষার্থীও স্কুলের বোর্ড সদস্য নির্বাচন অথবা খেলার মাঠের কৃত্রিম ঘাস বদলানোর জন্য অর্থ বরাদ্দের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের মতামত জানাতে পারেননি।
নতুন এই আইনের কারণে ভোটারদের নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে পাসপোর্ট অথবা জন্ম সনদ দেখাতে হচ্ছে। বিশেষ করে, নাম পরিবর্তনের কারণে বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।
তাদের জন্ম সনদে তাদের আগের নাম থাকে, যা বর্তমান পরিচয়পত্রের সঙ্গে মেলে না। ডেরির বাসিন্দা ৪৫ বছর বয়সী ব্রুক ইয়ং তেমনই একজন, যিনি ভোট দিতে গিয়ে এই সমস্যার সম্মুখীন হন।
তিনি জানান, নাগরিকত্বের প্রমাণ জোগাড় করতে তাকে বেশ কয়েকবার দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে।
নিউ হ্যাম্পশায়ারে নির্বাচনের দিনও ভোটার নিবন্ধন করার সুযোগ রয়েছে। তবে, নতুন আইনের কারণে ১১ই মার্চের নির্বাচনে অন্তত ৫৬ জন ভোটারকে নিবন্ধন করতে না পারার কারণে ফেরত যেতে হয়েছে।
ডেরির ক্লার্ক, টিনা গিলফোর্ড, নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আরও বেশি হওয়ার কারণে কী হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মিলফোর্ডের ক্লার্ক জোয়ান ডার্গিও জানিয়েছেন, নির্বাচনে অংশ নিতে না পেরে অনেকে ফিরে গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে বর্তমানে ‘সেফগার্ড আমেরিকান ভোটার এলিজিবিলিটি অ্যাক্ট’ বা ‘সেভ অ্যাক্ট’ নামে একটি বিল নিয়ে আলোচনা চলছে। এই বিলে ভোটার নিবন্ধনের জন্য নাগরিকত্বের প্রমাণ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
রিপাবলিকানরা মনে করেন, এর ফলে নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে। তবে ডেমোক্র্যাটরা এর বিরোধিতা করছেন এবং তারা মনে করেন, এর ফলে অনেক যোগ্য ভোটার তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।
নিউ হ্যাম্পশায়ারের নতুন আইনের পক্ষে রাজ্যের ভোটারদের সমর্থন রয়েছে। তবে, এই আইনের কারণে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। রাজ্যের আইনপ্রণেতারা এখন এই সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করছেন।
দরিদ্র ভোটারদের জন্ম সনদ পাওয়ার খরচ যোগাতে ভাউচার তৈরি এবং নাগরিকত্বের প্রমাণ যাচাই করতে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা চলছে।
আরিজোনার মতো কিছু রাজ্যে নাগরিকত্বের প্রমাণ যাচাই করার ক্ষেত্রে তথ্যের ব্যবস্থাপনায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। ক্যানসাসে এই ধরনের একটি আইন বাতিল হওয়ার আগে প্রায় ৩০ হাজার ভোটারকে নিবন্ধন করতে দেওয়া হয়নি।
টেক্সাসেও ভোটার নিবন্ধন এবং যাচাই করার জন্য অনুরূপ একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে।
বিষয়টি এখন শুধু নিউ হ্যাম্পশায়ারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি সারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ভবিষ্যতে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও প্রভাবিত করতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস