ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা, শিন বেটের প্রধানকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পথে নেমে এসেছেন হাজার হাজার ইসরায়েলি নাগরিক। গাজায় আবার যুদ্ধ শুরুর ঘোষণার পরই এই বিক্ষোভ দেখা যায়।
বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপকে গণতন্ত্রের পরিপন্থী হিসেবে দেখছেন এবং গাজায় আটকে পড়া ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন।
তেল আবিবের হাবিমা স্কোয়ারে জড়ো হয়ে বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের পতাকা হাতে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। তাদের মূল দাবি, গাজায় আটক জিম্মিদের দ্রুত মুক্তি দিতে হবে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, নেতানিয়াহু সরকার রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এমনটা করছে। তাদের মতে, নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তের কারণে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ৬৩ বছর বয়সী মোশে আহাহারোনি রয়টার্সকে জানান, “ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় শত্রু হলেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গত ২০ বছরে তিনি দেশের এবং নাগরিকদের কোনো খেয়াল রাখেননি।”
নেতানিয়াহু অবশ্য তার বিরুদ্ধে ওঠা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, শিন বেট প্রধানের ওপর তার আস্থা ছিল না।
তবে সমালোচকরা বলছেন, নেতানিয়াহু এমন একটি পদক্ষেপ নিয়েছেন যা ইসরায়েলের গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল করে দেবে।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট এই বরখাস্তের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে। নেতানিয়াহু এবং শিন বেট প্রধান রোনেন বার-এর মধ্যে বেশ কয়েক মাস ধরে মতবিরোধ চলছিল।
এর মূল কারণ ছিল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে ঘিরে ঘুষের অভিযোগ এবং গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামাস হামলা প্রতিরোধে ব্যর্থতা। বার এক চিঠিতে জানান, তাকে সরানোর পেছনে ৭ অক্টোবরের ঘটনার ‘সত্য উন্মোচন’ বন্ধ করার চেষ্টা ছিল।
বিরোধী দলের নেতা ইয়াইর লাপিদ সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত অমান্য করা হলে দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যদি ৭ অক্টোবরের সরকার আদালতের সিদ্ধান্ত না মেনে চলে, তবে সেই দিন থেকেই তারা অবৈধ হয়ে যাবে।
এমনটা হলে পুরো দেশ অচল করে দিতে হবে।
শুধু তাই নয়, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী আচরণের অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। জানা গেছে, তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারাভ-মিয়ারাকে অভিশংসিত করার প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছেন।
বাহারাভ-মিয়ারাও প্রধানমন্ত্রীর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। তিনি নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি আপাতত শিন বেটের নতুন প্রধান নিয়োগ করতে পারবেন না।
গাজায় যুদ্ধ পুনরায় শুরুর পর জিম্মিদের ভাগ্য নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, যুদ্ধ চললে জিম্মিরা হয়তো তাদের অপহরণকারীদের হাতে অথবা ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে নিহত হতে পারেন।
নেতানিয়াহুর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ওফির ফাল্কের মতে, সামরিক চাপের কারণেই হামাস গত নভেম্বরে একটি চুক্তিতে রাজি হয়েছিল, যেখানে প্রায় ৮০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তিনি মনে করেন, জিম্মিদের মুক্ত করার এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত পথ।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা