টাইপ ২ ডায়াবেটিস: লিভার ও প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, গবেষণায় উদ্বেগ
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস আছে, তাদের মধ্যে লিভার এবং প্যানক্রিয়াটিক (অগ্ন্যাশয়) ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি।
বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়ছে। গবেষণাটি বলছে, ডায়াবেটিস ও স্থূলতা—উভয়ই ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়, তবে ডায়াবেটিস এক্ষেত্রে একটি স্বতন্ত্র ঝুঁকির কারণ।
গবেষণায় প্রায় ৯৫,০০০ মানুষের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ফলাফলে দেখা যায়, যাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস নতুন করে ধরা পড়েছে, তাদের মধ্যে মহিলাদের প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ এবং লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় পাঁচগুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
শুধু তাই নয়, পুরুষদের ক্ষেত্রেও এই ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। যাদের ডায়াবেটিস হয়েছে, তাদের মধ্যে পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের সম্ভাবনা প্রায় ৭৪ শতাংশ এবং লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় চারগুণ বেড়ে যায়।
এছাড়া, ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মধ্যে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকিও কিছুটা বাড়ে।
গবেষণাটি যুক্তরাজ্যের একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক ডেটা ব্যাংক, ইউকে বায়োব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে। এতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ২৩,৭৫০ জন ব্যক্তির তথ্য ৭o,০০০ জনের বেশি সুস্থ মানুষের তথ্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
গবেষণায় স্থূলতাকে বিবেচনায় নেওয়ার পরও ডায়াবেটিসের সরাসরি প্রভাব নজরে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস রোগীদের ক্যান্সার শনাক্তকরণের হার বেশি হওয়ার কারণে অনেক সময় ক্যান্সারের সংখ্যা বেশি দেখা যায়। তবে এই গবেষণায় ডায়াবেটিস শনাক্ত হওয়ার এক বছরের মধ্যে হওয়া ক্যান্সার শনাক্তকরণকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
গবেষণা বলছে, ডায়াবেটিস আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে স্থূলতা সম্পর্কিত ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫ বছর পর প্রায় ৪৮ শতাংশ বেশি ছিল, যেখানে মহিলাদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ২৪ শতাংশ।
তবে, ডায়াবেটিস আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার বা মেনোপজের পরে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়েনি।
যুক্তরাজ্যে লিভার এবং প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে কিছুটা কম। সেখানে প্রতি ৭৬ জন পুরুষের মধ্যে ১ জন এবং ১৩০ জন মহিলার মধ্যে ১ জনের লিভার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অন্যদিকে, প্রতি ৫৫ জন পুরুষের মধ্যে ১ জন এবং ৫৯ জন মহিলার মধ্যে ১ জনের প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার হতে পারে।
ডায়াবেটিস কীভাবে ক্যান্সার সৃষ্টি করে, তা এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ইনসুলিনের উচ্চ মাত্রা, উচ্চ রক্ত শর্করা এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ এই ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।
এছাড়া, হরমোনের মাত্রা, ইনসুলিনের প্রতি শরীরের সংবেদনশীলতা এবং শরীরের মেদের ভিন্নতা—এসব কারণে নারী ও পুরুষের মধ্যে ঝুঁকির পরিমাণে পার্থক্য দেখা যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা এবং সুষম খাবার গ্রহণ করা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ। ধূমপান পরিহার করা এবং মদ্যপান সীমিত করার মতো বিষয়গুলোও এক্ষেত্রে জরুরি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান