ইউক্রেন যুদ্ধ: কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার আলোচনা।
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উদ্দেশ্যে রাশিয়া সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে। আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো কৃষ্ণসাগরে নৌ-চলাচল নির্বিঘ্ন করা এবং বৃহত্তর পরিসরে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করা। আগামী সোমবার (আজ) সৌদি আরবে এই বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
রোববার ইউক্রেনের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের আলোচনার পরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই আলোচনার প্রধান লক্ষ্য হলো কৃষ্ণসাগরে নৌ-চলাচলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং জাহাজ চলাচলে স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা। তবে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে এখনো অনেক বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।
মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির’ আশা প্রকাশ করেছেন, অন্যদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সতর্ক করে বলেছেন, কঠিন আলোচনা অপেক্ষা করছে।
ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উইটকফ বলেন, “আমার মনে হয়, আপনারা সোমবার সৌদি আরবে বিশেষ করে কৃষ্ণসাগরে জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কিছু বাস্তব অগ্রগতি দেখতে পাবেন। এবং সেখান থেকে স্বাভাবিকভাবেই আপনারা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির দিকে এগিয়ে যাবেন।”
অন্যদিকে, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পেসকভ বলেন, “আমরা এখনো এই পথের শুরুতেই আছি।”
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাবকে উইটকফ ‘ভঙ্গিমা ও ভান’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এটি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর একটি ‘সরল’ ধারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, যেখানে তিনি এবং অন্যান্য ইউরোপীয় নেতারা মনে করেন, “আমাদের সবারই উইনস্টন চার্চিলের মতো হওয়া উচিত।”
আলোচনায় মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেওয়া উইটকফ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসা করে বলেন, তিনি পুতিনকে ‘পছন্দ’ করেন এবং তাকে ‘খারাপ লোক’ মনে করেন না।
তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধ পরিস্থিতি বেশ জটিল, এবং এর পেছনের সব কারণ রয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন যে পুতিন ‘অত্যন্ত বুদ্ধিমান’ এবং তিনি শান্তি চান বলেও বিশ্বাস করেন।
ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন আসন্ন ইস্টার উৎসবের আগেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি বৃহত্তর যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিশ্চিত করতে চাইছে। হোয়াইট হাউস চাইছে আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে, অর্থাৎ পশ্চিমা ও অর্থোডক্স উভয় চার্চের ইস্টার সানডে’র আগেই এই চুক্তি সম্পন্ন করতে।
তবে, সংবাদ সংস্থাটিকে সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই সময়সীমা পেছাতে পারে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা ‘গঠনমূলক ও অর্থবহ’ হয়েছে এবং এতে জ্বালানি খাতসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় রবিবার অন্তত সাতজন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। স্থানীয় ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা ও জরুরি পরিষেবা সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে গভীর রাতে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। টানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিমান হামলার সাইরেন বাজতে থাকে।
রাশিয়ার ড্রোন ও ভূপাতিত হওয়া ড্রোনগুলোর ধ্বংসাবশেষ আবাসিক ভবনগুলোতে পড়েছে। এছাড়া, রুশ সেনারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চলের স্রিবনে গ্রামটি দখল করেছে।
তবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্ক অঞ্চলের নাদিয়া গ্রামটি পুনরুদ্ধার করেছে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালে রাশিয়া আক্রমণের পর থেকে লুহানস্ক অঞ্চলের প্রায় পুরোটাই তাদের দখলে চলে গিয়েছিল।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান