যুক্তরাজ্যের পরিবারগুলোর জীবনযাত্রার মান ২০৩০ সাল নাগাদ কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটাই উঠে এসেছে, যেখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দরিদ্র পরিবারগুলো।
এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দল লেবার পার্টির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সব পরিবারের জীবনযাত্রার মান কমতে থাকবে। এর মধ্যে, যাদের আয় সবচেয়ে কম, তাদের জীবনযাত্রার মান মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ আয়ের মানুষের তুলনায় দ্বিগুণ হারে কমবে।
জোসেফ রাউন্ট্র্রি ফাউন্ডেশন (জেআরএফ) নামক একটি গবেষণা সংস্থা এই বিশ্লেষণটি তৈরি করেছে।
বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, ২০২৩ সাল সম্ভবত এই দশকের শুরুতে জীবনযাত্রার মানের সর্বোচ্চ পর্যায় ছিল। জেআরএফের হিসেবে, ২০৩০ সাল নাগাদ একটি পরিবারের গড়পড়তা আয় ১,৪০০ পাউন্ড কমে যাবে, যা তাদের ব্যয়ের যোগ্য অর্থের ৩ শতাংশ হ্রাস নির্দেশ করে।
সবচেয়ে কম আয়ের পরিবারগুলোর ক্ষেত্রে এই পরিমাণ বছরে ৯০০ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে, যা তাদের ব্যয়ের যোগ্য অর্থের ৬ শতাংশ হ্রাস দেখাবে।
এই পরিস্থিতিতে লেবার পার্টির নেতারা তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। বিরোধী দলীয় নেতা কিয়ার স্টারমারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি, ‘কর্মজীবী মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা’ কতটা সম্ভব, তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ট্রেজারি বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের আসন্ন বাজেট পেশ করার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সরকার ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটতে পারে, যা জীবনযাত্রার মান আরও কমিয়ে দিতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋণের সুদ পরিশোধের খরচ বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার কারণে সরকারের হাতে থাকা অর্থের পরিমাণও কমে যাবে।
জেআরএফের পরিচালক আলফি স্টারলিং মনে করেন, জীবনযাত্রার মান কমার এই ধারা পরিবর্তনে আরও বেশি কাটছাঁট করা কোনো সমাধান নয়।
তার মতে, সরকারের উচিত ধনী ব্যক্তিদের উপর কর বাড়ানোর কথা বিবেচনা করা।
এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কর্মীদের বেতন বাড়ছে এবং সুদের হার কমানো হয়েছে।
এছাড়া, পেনশন স্কিমের উপর একটি বিশেষ সুবিধা (ট্রিপল লক) চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে অনেক বয়স্ক নাগরিকের পেনশন বাড়ানো হবে।
সরকার নির্মাণ খাতেও বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে।
এই বিষয়ে স্থানীয় সরকারগুলোর উদ্বেগের কারণ হলো, আসন্ন বাজেট তাদের জন্য বরাদ্দ কমাতে পারে, যা জরুরি পরিষেবাগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
স্থানীয় সরকারগুলোর প্রধানরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে অনেক কাউন্সিল দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে, বিরোধী দলীয় নেতারা সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করছেন।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, ভোটারদের মধ্যে কোনো দলের প্রতিই অর্থনীতির ব্যবস্থাপনার উপর তেমন আস্থা নেই।
জরিপে কিয়ার স্টারমার এবং ট্রেজারি প্রধান র্যাচেল রিভস-এর উপর সবচেয়ে বেশি অনাস্থা প্রকাশ করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের বর্তমান চ্যান্সেলর (অর্থমন্ত্রী) র্যাচেল রিভস সম্প্রতি জানান, দেশে প্রকৌশলী, রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি এবং ইলেক্ট্রিশিয়ানের মতো দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে।
সরকার এই সমস্যা সমাধানে নতুন করে পরিকল্পনা করছে, যেখানে নির্মাণ শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ এবং আবাসনের চাহিদা মেটানোর উপর জোর দেওয়া হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান