রহস্যে ঘেরা এক দানব: স্কটল্যান্ডের ‘নেসি’ আর তার সংস্কৃতি
বহু বছর ধরেই স্কটল্যান্ডের লখ নেস-এর (Loch Ness) রহস্যময় নেসি নামের দানবটি সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এক অপার কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। লেকের বিশাল জলরাশির গভীরে লুকিয়ে থাকা এই প্রাণীটিকে নিয়ে তৈরি হয়েছে অসংখ্য গল্প, সিনেমা, আর লোককথা।
নেসি যেন শুধু একটা জলজ প্রাণী নয়, বরং এটি সংস্কৃতি আর কল্পনার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। লখ নেস, যা কিনা যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম স্বাদু জলের আধার, এর আয়তন ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের সব হ্রদের সম্মিলিত আয়তনের চেয়েও বেশি।
এই লেকের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে নেসির গল্প, যা পর্যটকদের কাছে আজও একটি বড় আকর্ষণ। এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে, নেসিকে কেন্দ্র করে পর্যটন ব্যবসা যেমন বেড়েছে, তেমনি তৈরি হয়েছে অসংখ্য কল্পকাহিনী।
১৯৩৩ সালের মে মাসে প্রথম নেসিকে দেখার দাবি করেন স্থানীয় এক হোটেল মালিক দম্পতি। এরপর থেকেই এটিকে নিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হতে থাকে। সেই ঘটনার রেশ ধরে রুপালি পর্দাতেও এসেছে নেসির গল্প।
‘দ্য সিম্পসনস’ এর মত জনপ্রিয় কার্টুন থেকে শুরু করে, কবি টেড হিউজের কবিতায়ও নেসির দেখা পাওয়া যায়। সম্প্রতি, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর শোন্যাগ মারে নামের একজন সঙ্গীত পরিচালক নেসিকে নিয়ে একটি পারিবারিক সঙ্গীতনাট্য তৈরি করেছেন, যা খুব শীঘ্রই এডিনবার্গে মঞ্চস্থ হবে।
নেসিকে নিয়ে মানুষের আগ্রহের কারণ হয়তো এর রহস্যময়তা। অনেকে একে নিছক গুজব মনে করলেও, এর গল্পগুলো মানুষকে আজও টানে। নেসি যেন প্রকৃতির এক লুকানো খেলা, যা কৌতূহলীদের মনে প্রশ্নের জন্ম দেয়।
এই দানবকে নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক চলচ্চিত্র। ১৯৩৪ সালের ‘দ্য সিক্রেট অফ দ্য লখ’ ছিল নেসিকে নিয়ে তৈরি প্রথম সিনেমাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও, ‘বেনিথ লখ নেস’, ‘লখ নেস’, এমনকি ওয়ার্নার হার্জগ-এর মতো খ্যাতিমান পরিচালকের ‘ইনসিডেন্ট অ্যাট লখ নেস’-এর মতো চলচ্চিত্রেও নেসির ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেখা গেছে।
নেসির গল্পে প্রায়ই দেখা যায়, কিছু মানুষ এর অস্তিত্বে বিশ্বাসী, আবার কেউ একে উড়িয়ে দেয়। তবে, এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বই হয়তো নেসির আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে তোলে। নেসি যেন মানুষের কল্পনার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যা প্রকৃতির রহস্যকে আরও গভীর করে তোলে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান