জার্মানির এক তরুণ নাগরিক, যিনি বর্তমানে ভয়াবহ এক পরিস্থিতির শিকার। লন্ডনের একজন অপরাধী তার পরিচয়পত্র চুরি করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করেছে, যার ফলস্বরূপ তার নামে জার্মান ডেটাবেজে একটি অপরাধের রেকর্ড তৈরি হয়েছে।
এই ঘটনার শিকার হওয়া ২৪ বছর বয়সী রামি বাত্তিখের জীবন এখন দুর্বিষহ। জার্মানিতে, বিশেষ করে নিজের শহর বনে, তিনি গত চার বছর ধরে একটিও চাকরি পাননি, যার ফলে তার ভবিষ্যৎ জীবনের স্বপ্ন ভেঙে গেছে।
২০১৯ সালে লন্ডনে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন রামি। সেখানে তার আইডি কার্ডটি হারিয়ে যায় বা চুরি হয়। শুরুতে বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেননি তিনি।
নতুন আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করেন। দুই বছর পর বনের ভোডাফোন ফাইন্যান্স বিভাগে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ শেষ করেন। এরপর তিনি ভোডাফোন এবং স্থানীয় ট্যাক্স অফিসে চাকরির প্রস্তাব পান।
কিন্তু তখনই তার জীবনে নেমে আসে এক দুঃস্বপ্ন।
নিয়মিত কর্মচারী যাচাইয়ের সময় জানা যায়, লন্ডনে তার নামে একটি অপরাধের রেকর্ড রয়েছে। রামি হতবাক হয়ে যান। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তার নিয়োগকর্তাদের জানান যে, তিনি ঘটনার সময় যুক্তরাজ্যে ছিলেন না।
তার কাছে প্রমাণ হিসেবে তিউনিসিয়ায় থাকার পাসপোর্ট সিল ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তার কথা বিশ্বাস করতে রাজি হয়নি।
২০২১ সালের মার্চ মাসে, বাত্তিখের পরিচয় ব্যবহার করে অন্য একজন ব্যক্তি লন্ডনের একটি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন। তার বিরুদ্ধে লাইসেন্স ও বীমা ছাড়া গাড়ি চালানো, প্রতারণা এবং অন্য ব্যক্তির পরিচয়পত্র ব্যবহার করার অভিযোগ ছিল।
উড গ্রিন ক্রাউন কোর্টের একজন বিচারক এই ঘটনার বিষয়টি প্রথম নজরে আনেন। এরপর বিষয়টি সমাধানের জন্য বিচারক ডড, যিনি বর্তমানে দায়িত্বে আছেন, তিনি ২০১৯ সালে মেট্রোপলিটন পুলিশকে বিষয়টি সংশোধন করার জন্য অনুরোধ করেন।
কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। বাত্তিখের দুঃস্বপ্ন আরও বাড়ে। এর ১৪ মাস পর, তার আইডি ব্যবহার করে আরও কিছু অপরাধ সংঘটিত হয়, যার মধ্যে জনসম্মুখে ছুরি বহন করার মতো গুরুতর অভিযোগও ছিল।
বাস্তবতা হলো, তার তথাকথিত অপরাধের তালিকা দীর্ঘ হতে থাকে। তিনি হতাশ হয়ে পড়েন এবং তার জীবন শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করতে থাকেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন না, কেন যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষ তার আইডি চুরির বিষয়টি নিশ্চিত করার পরও তার নাম অপরাধীর তালিকা থেকে সরাচ্ছে না।
গত বছর তিনি মেট্রোপলিটন পুলিশকে একটি চিঠি লেখেন, কারণ রেকর্ড পরিবর্তনের ক্ষমতা তাদের হাতেই ছিল। কিন্তু কোনো ফল হয়নি।
আমি এভাবে আর কত দিন বাঁচব? একটি অপরাধের রেকর্ড থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য অপেক্ষা করাটা অসহনীয়। আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঘটে যাওয়া ভুলের কারণে আমি অসহায় বোধ করছি।”
বর্তমানে তার কোনো চাকরি নেই। তিনি তার বিল পরিশোধের জন্য গাড়ি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এমনকি তিনি ইন্টারপোলের মাধ্যমে ডিএনএ বা আঙুলের ছাপ পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।
মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এবং অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে কাজ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। তারা স্বীকার করেছে যে, এই দীর্ঘসূত্রিতা উদ্বেগের কারণ হয়েছে, তবে তারা খুব শীঘ্রই আবেদনকারীকে একটি আপডেট জানাবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান