যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে ইসরায়েলের কিছু তরুণ-তরুণী সামরিক বাহিনীতে যোগ না দিয়ে কারাবরণ করতে রাজি হচ্ছেন। তাদের এই প্রতিবাদ ক্রমশ জোরালো হচ্ছে, যেখানে বিবেককে প্রাধান্য দিয়ে তারা বেছে নিচ্ছেন ভিন্ন পথ।
ইতোমধ্যে, ১৮ বছর বয়সী ইতামার গ্রিনবার্গ বেশ কয়েকবার কারাবাস করেছেন। তার অপরাধ ছিল, বাধ্যতামূলক সামরিক সেবায় যোগ দিতে অস্বীকার করা। ইসরায়েলের আইন অনুযায়ী, অধিকাংশ ইহুদি এবং কিছু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৮ বছর বয়স পার হওয়া নাগরিকের জন্য সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক।
গ্রিনবার্গ বলছেন, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন তার এই সিদ্ধান্তকে আরও দৃঢ় করেছে। তিনি মনে করেন, এই যুদ্ধ গণহত্যার শামিল।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর যে আক্রমণ হচ্ছে, তা গণহত্যার পর্যায়ে পড়ে না। তবে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ১৭ মাসে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৫০,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার থেকে নতুন করে অভিযান শুরুর পর এখন পর্যন্ত ৬৭০ জনের বেশি নিহত এবং ১,২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
গ্রিনবার্গের মতো যারা সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে অস্বীকার করছেন, তাদের সমাজে একঘরে করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। ইসরায়েলের সামাজিক কাঠামোতে সামরিক বাহিনী একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ছোটবেলা থেকেই শিশুদের শেখানো হয়, তারা একদিন দেশের সুরক্ষায় সেনাদের মতো কাজ করবে। এমনকি, তাদের সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন স্কুলে প্রচারণা চালানো হয়।
কিন্তু গ্রিনবার্গের এই সিদ্ধান্তকে অনেকে ভালোভাবে নেয়নি। তাকে দেশদ্রোহী, ইহুদিবিদ্বেষী এবং সন্ত্রাসী সমর্থক হিসেবেও অভিহিত করা হয়েছে। এমনকি, পরিবারের সদস্যরাও তার প্রতি বিরূপ মন্তব্য করেছেন।
কারাগারে থাকাকালীন সময়েও তাকে একাকী কারাবাসে রাখা হয়েছিল, কারণ অন্য বন্দিরা তাকে হুমকি দিয়েছিল।
তবে সামাজিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, গ্রিনবার্গের মতো বিবেকবান তরুণ-তরুণীরা তাদের অবস্থানে অবিচল রয়েছেন। ‘মেসারভট’ নামক একটি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় এক ডজনের মতো ইসরায়েলি তরুণ সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে প্রকাশ্যে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
যদিও এই সংখ্যাটি এখনো খুবই কম, তবে আগের বছরগুলোর তুলনায় এটি কিছুটা হলেও বেশি।
আরেকটি সংগঠন, ‘ইয়েশ গুল’-এর মতে, প্রতি বছর গড়ে ইসরায়েলের প্রায় ২০ শতাংশ তরুণ সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে চায় না। এর মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি সামরিক দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানায়, আবার অনেকে মানসিক স্বাস্থ্য বা শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অব্যাহতি নেয়।
তাদের এই প্রতিবাদ ইসরায়েলের সমাজে গভীর বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। একদিকে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে, অন্যদিকে গাজায় জিম্মিদের মুক্তির দাবিতেও অনেকে সোচ্চার।
এই পরিস্থিতিতে, গ্রিনবার্গের মতো তরুণ-তরুণীরা মনে করেন, তাদের এই পদক্ষেপ একটি শান্তিপূর্ণ সমাজের পথ তৈরি করতে পারে।
তাদের এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ১৯ বছর বয়সী লিয়র ফোগেল বলেছেন, সামরিক বাহিনী একটি সহিংস ও বলপ্রয়োগের প্রতিষ্ঠান, যা তিনি সব সময়ই ঘৃণা করেন। তিনি মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কারণ দেখিয়ে সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।
তার মতে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ফিলিস্তিনিদের ওপর যে নিপীড়ন চালায়, তা তিনি কখনোই সমর্থন করেন না।
তবে, তাদের এই ভিন্নমত ইসরায়েলি সমাজে এখনো সংখ্যালঘু। কিন্তু তারা বিশ্বাস করেন, তাদের এই প্রতিবাদ সামরিকীকরণের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর আলোচনা শুরু করতে সহায়ক হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন