মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি জুরি, মনসান্তোর মূল কোম্পানি বায়ারকে রাউন্ডআপ (Roundup) নামক আগাছানাশক ব্যবহারের কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত এক ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ২.১ বিলিয়ন ডলার প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে। এই রায়ের ফলে বিশ্বজুড়ে বহুল ব্যবহৃত এই রাসায়নিকটির নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
বায়ার কর্তৃপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছে।
আদালতের রায়ে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৬ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার এবং শাস্তিমূলক জরিমানা বাবদ ২ বিলিয়ন ডলার প্রদানের কথা বলা হয়েছে। মামলার বাদী জন বার্নেস (John Barnes) অভিযোগ করেন, রাউন্ডআপ ব্যবহার করার ফলে তিনি নন-হজকিন্স লিম্ফোমা (Non-Hodgkin’s Lymphoma) নামক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন।
তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই রায়ের ফলে বার্নেস তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা পাবেন। আইনজীবীরা আরও অভিযোগ করেন, মনসান্তো বহু বছর ধরে রাউন্ডআপের ক্ষতিকর দিকগুলো গোপন করেছে।
রাউন্ডআপে ব্যবহৃত প্রধান রাসায়নিক উপাদান হলো গ্লাইফোসেট (glyphosate)। কিছু গবেষণায় গ্লাইফোসেটের সঙ্গে ক্যান্সারের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে।
যদিও, মার্কিন পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (EPA) বলছে, নির্দেশিত নিয়মে ব্যবহার করলে এটি মানুষের জন্য ক্যান্সার সৃষ্টিকারী হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে, রাউন্ডআপ নিয়ে হওয়া অসংখ্য মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, গ্লাইফোসেট নন-হজকিন্স লিম্ফোমা সৃষ্টি করে এবং মনসান্তো দীর্ঘদিন ধরে এর গুরুতর ঝুঁকি সম্পর্কে জন সাধারণকে সতর্ক করেনি।
মনসান্তো, যা ২০১৮ সালে বায়ারের অধীনে আসে, তাদের রাউন্ডআপ পণ্যটির নিরাপত্তা নিয়ে এখনও অনড় অবস্থানে রয়েছে। তারা বলছে, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার মূল্যায়নের সঙ্গে এই রায় সাংঘর্ষিক।
বায়ার এরই মধ্যে রাউন্ডআপ সম্পর্কিত ১ লক্ষ ৭৭ হাজারের বেশি মামলার সম্মুখীন হয়েছে এবং এসব মামলার নিষ্পত্তির জন্য ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ আলাদা করে রেখেছে। বায়ার আরও বলছে, তারা তাদের পণ্যের নিরাপত্তা সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে আত্মবিশ্বাসী।
এই মামলার রায় বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে। কারণ, আমাদের দেশেও কৃষিকাজে আগাছানাশক ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। রাউন্ডআপের মতো রাসায়নিক পদার্থের নিরাপত্তা এবং এর সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।
একইসঙ্গে, কৃষকদের জন্য নিরাপদ এবং কার্যকর বিকল্প উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই ধরনের মামলার রায়গুলি কীটনাশকের নিরাপত্তা এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন নীতি নির্ধারণ করতে সহায়ক হবে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।