জার্মান সামরিক শক্তিবৃদ্ধি: ইউরোপে এক নতুন যুগের সূচনা
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জার্মানি তাদের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এক বিশাল পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। দেশটির প্রতিরক্ষা খাতে কয়েক বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, জার্মানির সরকার সামরিক ব্যয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জার্মান সামরিক বাহিনীর (বুন্দেসভ্যার) দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের অভাব ছিল। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের পর পরিস্থিতি বদলেছে।
জার্মানির নতুন সরকার প্রধান, ফ্রায়েডরিশ মেয়ার্জ, সামরিক খাতে বিনিয়োগের ওপর জোর দিয়েছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, আগামী দশ বছরে জার্মানি তার জিডিপির প্রায় ৩.৫ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করবে। এর ফলে দেশটির সামরিক খাতে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ইউরোর বেশি অর্থ বিনিয়োগ করা হতে পারে।
জার্মান সামরিক বাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তা রাল্ফ হামারস্টেইন সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানান, জার্মানি ইউরোপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, জার্মানি তার সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জার্মানিতে এই ‘জেইটেনভেন্ডে’ বা ‘টার্নিং পয়েন্ট’–এর মূল কারণ হলো ইউক্রেন যুদ্ধ।
এই যুদ্ধের ফলে জার্মানির নিরাপত্তা নীতিতে পরিবর্তন এসেছে এবং সামরিক ব্যয় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
এর আগে, জার্মানির সামরিক ব্যয় ছিল তুলনামূলকভাবে কম। এমনকি, ২০০৫ সালে তা জিডিপির মাত্র ১.১ শতাংশে নেমে এসেছিল।
তবে ন্যাটোর সদস্য হিসেবে জার্মানিকে প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির ২ শতাংশ ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হয়েছে।
সামরিক ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি জার্মানি তাদের সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণের দিকেও নজর দিচ্ছে।
যদিও সেনাবাহিনীর জনবল ও অবকাঠামো দুর্বলতা এখনো একটি উদ্বেগের বিষয়।
সংসদীয় কমিশনার এভা হোগল সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, বুন্দেসভ্যারে এখনো অনেক কিছুর অভাব রয়েছে।
তবে সরকার ২০২৩ সালের মধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২,০৩,০০০ জনে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর এই উদ্যোগে জনগণের সমর্থনও বাড়ছে।
মার্চ মাসে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৬৬ শতাংশ জার্মান নাগরিক প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন।
একইসঙ্গে, ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, দেশের নিরাপত্তা ও অবকাঠামো উন্নয়নে জার্মানির ঋণ নেওয়া উচিত।
জার্মানির এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
সামরিক শক্তিবৃদ্ধি করে জার্মানি ইউরোপের নিরাপত্তা জোটে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে চাইছে।
এর মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় জার্মানির অঙ্গীকার আরও দৃঢ় হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন