**ট্রাম্পের উপসাগরীয় আরব সফর: লাভ-ক্ষতির হিসাব**
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্প্রতি উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোতে সফর শেষ হয়েছে। এই সফরে তিনি সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এর সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। মূলত, দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী তেল-সুরক্ষা সম্পর্কের বাইরে গিয়ে বিনিয়োগ ও অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে চাইছে।
ট্রাম্পের এই সফর কয়েকটি ক্ষেত্রে সাফল্য বয়ে আনলেও কিছু প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
সফরের শুরুতে সৌদি আরবের দিকে নজর দেওয়া যাক। সৌদি আরব চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক নিরাপত্তা চুক্তি। সরাসরি সেই চুক্তি না হলেও, নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে বিশাল অঙ্কের অস্ত্র চুক্তি করেছে, যা ভবিষ্যতে বৃহত্তর চুক্তির পথ খুলে দিতে পারে।
সৌদি আরবের পক্ষ থেকে ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগের অঙ্গীকার করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব চুক্তি অন্যতম। তবে, সৌদি আরব তাদের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পায়নি। তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে চেয়েছিল, যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে উদ্বেগ ছিল।
সফরে সিরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে, যা সৌদি আরবের জন্য একটি কূটনৈতিক জয়। ট্রাম্প সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং তাঁর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। এর ফলে সিরিয়ায় সৌদি আরবের বিনিয়োগের পথ খুলতে পারে।
এবার আসা যাক কাতারের কথায়। কাতার ছিল ট্রাম্পের প্রথম সরকারি সফরে আসা একটি দেশ। এর আগে ২০০৩ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ কাতার সফর করেছিলেন। ট্রাম্পের এই সফরে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মধ্যে ৯৬ বিলিয়ন ডলারের বোয়িং বিমান কেনার চুক্তি অন্যতম।
এছাড়াও, কাতার একটি বোয়িং ৭৪৭-৮ বিমান উপহার হিসেবে ট্রাম্পকে দিয়েছে, যা নিয়ে কিছু বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কাতারের সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা। যুক্তরাষ্ট্র কাতারকে ইরানের সম্ভাব্য হুমকি থেকে রক্ষা করতে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে। কাতার বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটির স্বাগতিক।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) জন্য এই সফরের প্রধান লক্ষ্য ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং প্রযুক্তি খাতে বৃহত্তর বিনিয়োগ। তারা এ ক্ষেত্রে কিছু সাফল্য অর্জন করলেও, উন্নত মার্কিন মাইক্রোচিপের অবাধ প্রবেশাধিকারের বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হয়নি। এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি বিধিনিষেধের কারণে তারা কিছুটা পিছিয়ে আছে।
তবে, একটি বিশাল ডেটা সেন্টার কমপ্লেক্স তৈরির জন্য দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছে, যা এআই প্রযুক্তির উন্নয়নে সহায়তা করবে। এই ডেটা সেন্টারের ক্ষমতা হবে ৫ গিগাওয়াট, যা একটি বড় শহরের বিদ্যুতের চাহিদার সমান। ইউএই ২০৩১ সালের মধ্যে এআই-এর ক্ষেত্রে বিশ্বনেতা হতে চায়, তবে তাদের এই লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় মার্কিন চিপ পাওয়া এখনো অনিশ্চিত।
উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই সম্পর্ক উন্নয়নের ফলে বিশ্ব অর্থনীতি ও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের জন্য এর কিছু প্রভাব থাকতে পারে, যেমন— জ্বালানি তেলের দাম এবং প্রবাসী আয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন