গাজাবাসীর ‘স্বেচ্ছায়’ অন্যত্র চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে ইসরায়েল সরকার একটি নতুন সংস্থা তৈরি করতে যাচ্ছে। সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে, নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পরেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এর আগে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজার বাসিন্দাদের অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সমালোচকরা এটিকে জাতিগত নির্মূলের শামিল বলে অভিহিত করেছেন, যা একটি জনগোষ্ঠীকে তাদের আবাসভূমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করার শামিল।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, শনিবার নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজরায়েল কাৎজ-এর এই প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। মুখপাত্র আরও জানিয়েছেন, নতুন এই সংস্থার মূল কাজ হবে ‘নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত উপায়ে গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের তৃতীয় কোনো দেশে স্বেচ্ছায় চলে যেতে সহায়তা করা’।
এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, অভিবাসন বিষয়ক কার্যক্রম প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা হবে। নেতানিয়াহুর মুখপাত্র জানিয়েছেন, যারা গাজা ছাড়তে ইচ্ছুক, তাদের ইসরায়েলি এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, নিরাপদভাবে অন্য দেশে যেতে দেওয়া হবে।
দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলের কট্টরপন্থীরা গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করতে চাইছে। হামাসের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের মধ্যে তারা এই ধারণাকে আরও জোরালোভাবে সমর্থন করছে।
একইসঙ্গে, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েল সরকারের বিরুদ্ধে গাজায় মানবিক সহায়তা আটকে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে, যা সেখানকার বাসিন্দাদের চলে যেতে উৎসাহিত করার একটি কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত মাসে, ট্রাম্প গাজার দুই মিলিয়নেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে মিশর ও জর্ডানের মতো বিভিন্ন দেশে পুনর্বাসনের একটি পরিকল্পনা পেশ করেছিলেন। তিনি গাজাকে একটি “মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা” হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।
এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছে ফিলিস্তিনি, আরব আলোচক এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো।
তবে, নেতানিয়াহুর মুখপাত্র নির্দিষ্ট করে জানাননি, কোন তৃতীয় দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে রাজি আছে।
নেতানিয়াহু এর আগে ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করে বলেছিলেন, তিনি “একটি ভিন্ন গাজা” তৈরির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আরও বলেছিলেন, যুদ্ধ শেষে গাজায় হামাস বা ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কোনো শাসন থাকবে না।
ফেব্রুয়ারিতে, কাৎজ সামরিক বাহিনীকে ট্রাম্পের প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। ইসরায়েলের শান্তি আন্দোলন ‘পিস নাও’ এই পদক্ষেপের নিন্দা করে এটিকে “ইসরায়েলের ইতিহাসে একটি কলঙ্ক” বলে অভিহিত করেছে।
সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানায়, “যখন বোমা হামলা ও অবরোধের কারণে কোনো স্থানে জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়ে, তখন সেখানকার মানুষের চলে যাওয়াকে ‘স্বেচ্ছায়’ বলা যায় না।”
এ ব্যাপারে মিশরসহ অন্যান্য আরব দেশগুলো থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে, তারা বারবার এই সংঘাতের “দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান” এবং “একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার” ওপর জোর দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা