শিরোনাম: জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বন্যা ও খরায় বিপর্যস্ত বিশ্ব, বাংলাদেশের জন্য অশনি সংকেত
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমশ তীব্র হচ্ছে, যার ফলে বিশ্বজুড়ে দেখা যাচ্ছে চরম আবহাওয়ার রূপ। একদিকে যেমন দীর্ঘস্থায়ী খরা দেখা দিচ্ছে, তেমনি অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ বন্যা।
এই পরিস্থিতি শুধু পরিবেশের জন্য নয়, মানুষের জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রেও মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। এর ফলে জলীয় বাষ্প ধারণের ক্ষমতা বাড়ছে বায়ুমণ্ডলের, যা জলচক্রকে আরও দ্রুত করে তুলছে।
গরম বাতাস সাগর, নদী এবং মাটি থেকে বেশি জলীয় বাষ্প শোষণ করে নেয়। এর ফলস্বরূপ, অনেক অঞ্চলে দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টি হয় না, দেখা দেয় খরা।
আবার যখন বৃষ্টি হয়, তখন তা অতিবৃষ্টি রূপে আসে, যা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটায়।
উদাহরণস্বরূপ, ক্যালিফোর্নিয়ার কথা বলা যায়। ২০২৩ সালে এখানে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি ও তুষারপাত হয়েছিল, যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ছিল।
এরপরে আবার দেখা দেয় খরা, যার ফলে সেখানকার শুষ্ক গাছপালাগুলোতে আগুন ধরে যায় এবং ভয়াবহ দাবানল সৃষ্টি হয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রগুলোও উষ্ণ হচ্ছে। এর ফলে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
উদাহরণ হিসেবে, ২০২৩ সালে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ‘ড্যানিয়েল’ নামক ঘূর্ণিঝড়ের কারণে হওয়া ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কথা উল্লেখ করা যায়।
এই ঝড়ের ফলে দুটি বাঁধ ভেঙে যায় এবং ডেরনা শহরে ভয়াবহ বন্যা হয়, যার ফলে বহু মানুষের মৃত্যু হয়।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বায়ুমণ্ডল আরও বড় আকারের স্পঞ্জে পরিণত হচ্ছে। এটি আগের চেয়ে বেশি জলীয় বাষ্প শোষণ করতে পারে। যখন বৃষ্টিপাতের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন এই স্পঞ্জ থেকে দ্রুত জল বের হয়ে আসে।”
এই পরিবর্তনগুলো শুধু বৃষ্টিপাতের ধরনকেই প্রভাবিত করছে না, বরং তুষারপাতের উপরেও এর প্রভাব পড়ছে।
শীতকালে স্বাভাবিকের চেয়ে কম তুষারপাত হচ্ছে। শীত সামান্য উষ্ণ হওয়ায় দ্রুত বরফ গলছে এবং গাছপালা সেই জল শোষণ করে নিচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাবগুলো বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ। আমাদের দেশ এমনিতেই বন্যাপ্রবণ এবং ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যদি বৃষ্টিপাতের ধরন আরও অনিশ্চিত হয়ে যায়, তবে একদিকে যেমন খরা দেখা দিতে পারে, তেমনই বর্ষাকালে ঘন ঘন বন্যা হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে।
এতে কৃষিকাজ, খাবার পানি ও জীবনযাত্রার উপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকা আরও কঠিন হয়ে উঠবে, কারণ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি তাদের জন্য ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে।
একইসঙ্গে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো কমাতে টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস