যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি এবং শস্য চুক্তি পুনরায় চালুর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আলোচনা চলছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানা গেছে, সোমবারের বৈঠকে মূলত কৃষ্ণ সাগর দিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এর মাধ্যমে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে বৃহত্তর একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানো যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৈঠকে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ। তিনি জানান, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে।
ইউক্রেন চায়, রাশিয়া যেন তাদের বন্দরগুলো—ওডেসা, খেরসন ও মাইকোলাইভ—থেকে গোলাবর্ষণ বন্ধ করতে রাজি হয়। কারণ, এই বন্দরগুলো সচল রাখা তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ নিশ্চিত করেছেন, বৈঠকে ২০২২ সালের কৃষ্ণ সাগর শস্য চুক্তি পুনরায় চালুর বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানির সুযোগ তৈরি হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু রাশিয়া গত বছর এই চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। তাদের অভিযোগ ছিল, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার কৃষি পণ্য ও সারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার প্রতিশ্রুতি রাখেনি।
আলোচনা প্রসঙ্গে মস্কো থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক ডরসা জাব্বারি জানান, রিয়াদ বৈঠকে কোনো বড় ধরনের সাফল্যের সম্ভাবনা নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়া তাদের দাবিগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চাইছে।
রুশ প্রতিনিধি দল অন্তত আট ঘণ্টা ধরে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং কৃষ্ণ সাগর চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এর আগে সৌদি আরবে রাশিয়ার সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করেছিল। এই সময়ে উভয় পক্ষই যেন তাদের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা না করে, সে বিষয়েও কথা হয়।
যদিও এরই মধ্যে উভয় পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে জ্বালানি স্থাপনায় হামলার অভিযোগ এনেছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিরিগা বলেছেন, রাশিয়ার উচিত শান্তি আলোচনার নামে ভুয়া বিবৃতি দেওয়া বন্ধ করা। রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সুমি শহরে অন্তত ৬৫ জন আহত হওয়ার পর তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সিরিগা জোর দিয়ে বলেন, মস্কোর সঙ্গে যেকোনো আলোচনা ফলপ্রসূ করতে হলে সামরিক শক্তি, নিষেধাজ্ঞা এবং চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।
সম্প্রতি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি—উভয়েই ৩০ দিনের সীমিত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছেন। ট্রাম্প এই আলোচনার অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
তবে, ইউরোপের প্রভাবশালী দেশগুলো মনে করে, পুতিন আলোচনাকে কতটুকু গুরুত্ব দেবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, তিনি ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ এবং চারটি অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের শর্ত দিয়েছেন, যেগুলোর বেশির ভাগই এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
আলোচনার মধ্যেই রাশিয়া কিয়েভে টানা তৃতীয় রাতের মতো বিমান হামলা চালিয়েছে, যাতে একজন আহত হয়েছে এবং ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা কেবল তখনই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবে, যখন একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা