শীর্ষ ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা মার্কিন সামরিক পরিকল্পনার গোপন নথি আদান-প্রদান করেছেন, যা নিরাপত্তা বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এই ঘটনার জেরে এখন তাঁরাই পড়েছেন সমালোচনার মুখে, যাঁরা একসময় হিলারি ক্লিনটনের গোপন ই-মেইল ব্যবহারের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন।
জানা গেছে, উচ্চ-পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা একটি মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে অত্যন্ত গোপন সামরিক পরিকল্পনা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদান করেছেন।
এই গ্রুপ চ্যাটে অনিচ্ছাকৃতভাবে ‘দ্য আটলান্টিক’-এর সম্পাদক-ইন-চিফ জেফরি গোল্ডবার্গও যুক্ত ছিলেন। এই ঘটনায় গুরুতর নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
প্রশ্ন উঠেছে, তাঁরা সম্ভবত ‘গোয়েন্দা আইন’ (Espionage Act) লঙ্ঘন করেছেন কিনা। এই আইনে জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত গোপন তথ্য ভুলভাবে ব্যবহারের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
সাধারণত, এ ধরনের আলোচনা একটি সুরক্ষিত স্থানে (Sensitive Compartmented Information Facility – SCIF) হয়ে থাকে, যেখানে শ্রেণীবদ্ধ তথ্য নিয়ে আলোচনা করার ব্যবস্থা থাকে।
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন মুখপাত্র সিএনএনকে জানিয়েছেন, তাঁদের হাতে আসা বার্তাগুলো সম্ভবত সত্য। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না।
সিএনএন-এর অনুসন্ধানে জানা গেছে গোল্ডবার্গের মতে, এই গ্রুপ চ্যাটে যুক্ত থাকা কর্মকর্তাদের অনেকেই অতীতে গোপন তথ্য আদান-প্রদান নিয়ে অন্যদের সমালোচনা করেছিলেন।
প্রাক্তন ‘ফক্স নিউজ’-এর উপস্থাপক ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেট হেগসেথ, হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ স্টিফেন মিলার, প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এবং প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওসহ আরও অনেকে বারাক ওবামা ও জো বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গোপন তথ্য নিয়ে অসাবধানতার অভিযোগ এনেছিলেন।
তাদের প্রধান অভিযোগ ছিল, হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত ই-মেইল সার্ভার ব্যবহার করা নিয়ে।
২০১৫ ও ২০১৬ সালে রুবিও বেশ কয়েকবার হিলারির সমালোচনা করে টুইট করেছিলেন।
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি ‘ফক্স নিউজ’-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। এমনকি হিলারি ক্লিনটনও নন, যদিও তিনি নিজেকে তেমনই মনে করেন।
২০১৫ সালের আগস্টে ‘ফক্স নিউজ’-এর সাক্ষাৎকারে রুবিও আরও বলেন, গোপন তথ্য শুধুমাত্র সুরক্ষিত স্থানে দেখা উচিত, যাতে অননুমোদিত প্রবেশ বা নজরদারি এড়ানো যায়।
তিনি আরও বলেন, “আপনি অবশ্যই জানেন যে, ই-মেইলের মাধ্যমে, বিশেষ করে তাঁর ব্যক্তিগত সার্ভারে, এই তথ্য আদান-প্রদান করা উচিত নয়। তাঁরা যা করেছেন, তা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও অযোগ্যতার পরিচয়।
২০১৬ সালের নভেম্বরে ‘ফক্স নিউজ’-এ হেগসেথ হিলারির ই-মেইল ব্যবহারকে ‘অপরাধমূলক’ আখ্যা দেন।
তিনি বলেন, “হিলারি ক্লিনটন যা করেছেন, তার এক শতাংশের জন্যও অনেকে জেলে গিয়েছেন।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরেও হেগসেথ হিলারির কর্মকাণ্ডকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে মন্তব্য করেন।
যিনি আটলান্টিক-এর সাংবাদিককে গ্রুপ চ্যাটে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, সেই ওয়াল্টজও হিলারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
২০২৩ সালের জুনে তিনি টুইট করেন, “জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান হিলারির ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে অতি-গোপন বার্তা পাঠিয়েছিলেন।
আর বিচার বিভাগ (Department of Justice) এ বিষয়ে কী করল? কিছুই না।
২০২৪ সালের মে মাসে ‘ফক্স নিউজ’-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়াল্টজ বাইডেনের গোপন নথি ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করে বলেন, “এগুলো সবই অপরাধ, তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত অভিযোগ আনা উচিত।
২০২২ সালের আগস্টে মিলার টুইট করেন, “হিলারির অনিরাপদ সার্ভার ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় কাজ করার বিষয়টি (যা ক্লিনটনদের দুর্নীতি ঢাকার জন্য তৈরি করা হয়েছিল) সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলা হয়নি: বিদেশি শত্রুরা পৃথিবীর অন্য প্রান্ত থেকে সহজেই শ্রেণীবদ্ধ অভিযান ও গোয়েন্দা তথ্য হ্যাক করতে পারত।
২০১২ সালের শেষের দিকে ‘ফক্স নিউজ’-এ হেগসেথ ওবামা প্রশাসনের ‘জিরো ডার্ক থার্টি’ (Zero Dark Thirty) চলচ্চিত্রের নির্মাতাদের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করা নিয়েও সমালোচনা করেছিলেন।
এছাড়াও, জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক আরেক কর্মকর্তা, ডিরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স (Director of National Intelligence) টুলসি গাবার্ড ১৪ই মার্চ এক টুইটে সাংবাদিকদের কাছে তথ্য ফাঁস করার নিন্দা করেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন