গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় নিহত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে, মানবিক বিপর্যয় তীব্র।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আক্রমণ আবারও তীব্র হয়েছে। উত্তর থেকে দক্ষিণে অবিরাম বোমা বর্ষণে নারী ও শিশুসহ বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অনেকে।
সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চালানো হামলায় অন্তত ৬২ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে সাতজন শিশুসহ ২৩ জন মারা গেছে শুধুমাত্র রাতের বেলা হওয়া হামলায়।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানাচ্ছে, গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে দেইর আল-বালাহ, খান ইউনিস, বুরেইজ, গাজা সিটি, জাবালিয়া, এবং বেইত লাহিয়ায় ব্যাপক গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। খান ইউনিসে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় নেওয়া দুটি তাঁবুতে হামলায় কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছে।
বুরেইজে একটি আবাসিক ভবনে হামলায় নিহত হয়েছে আরও আটজন। এছাড়া, উত্তরাঞ্চলে গাজা সিটি এবং জাবালিয়ায় হামলার খবর পাওয়া গেছে। বেইত লাহিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় একটি তিন বছর বয়সী শিশুসহ তিনজন নিহত হয়েছে।
গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ উল্লেখ করে হামাস এক বিবৃতিতে এই ‘ভয়াবহ গণহত্যা’র তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ইসরায়েলকে থামাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামলা জোরদার করেছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় ৭৯২ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকশ’ শিশু রয়েছে। আহত হয়েছে ১,৬৬৩ জন।
জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং ত্রাণ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজায় কোনো নিরাপদ এলাকা নেই। ইসরায়েল কর্তৃক চিহ্নিত ‘মানবিক অঞ্চল’ এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও নিয়মিতভাবে ইসরায়েলি হামলার শিকার হচ্ছে।
সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষ আবারও বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হচ্ছে। গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর তারা যখন ধীরে ধীরে ঘরে ফিরছিল, তখনই শুরু হয়েছে এই নতুন আক্রমণ।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জাবালিয়া, বেইত লাাহিয়া, বেইত হানুন এবং গাজা সিটির শুজাইয়া সহ বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে হামলার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, উত্তর এলাকা থেকে ইসরায়েলের দিকে রকেট ছোড়া হয়েছে।
খান ইউনিস ও রাফাতেও হামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ এই পরিস্থিতিকে গাজার শিশুদের জন্য ‘মৃত্যুদণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করেছে। সংস্থাটি বলছে, শিশুরা তাদের তাঁবুতে ঘুমন্ত অবস্থায় নিহত হচ্ছে, তারা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে এবং ক্রমাগত হামলার শিকার হচ্ছে।
শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ১৮ মাসের ইসরায়েলি হামলায় ৫০,০০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং ১,১৩,০০০ জনের বেশি আহত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছে, যাদের জীবিত থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-এর নেতৃত্বে চালানো হামলায় প্রায় ১,১৩৯ জন ইসরায়েলি নিহত হয় এবং প্রায় ২৫০ জনকে বন্দী করা হয়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, অবশিষ্ট ৫৯ জন বন্দীকে মুক্ত করার জন্য হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই এই নতুন অভিযান চালানো হচ্ছে। হামাস জানিয়েছে, তারা চায় ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো মেনে চলুক এবং বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা শুরু করুক।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা