যুক্তরাষ্ট্রে তীব্র তাপপ্রবাহের ঝুঁকি: বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা?
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অসহনীয় গরম অনুভূত হচ্ছে। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধি একটি সাধারণ ঘটনা, তবে বর্তমানে তাপপ্রবাহের তীব্রতা এবং সময়কাল দুটোই বেড়েছে, যা জনস্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
এই পরিস্থিতিতে, কিভাবে উন্নত দেশগুলো তাদের নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেখানকার নাগরিকদের জন্য তাপপ্রবাহের ঝুঁকি সম্পর্কে একটি পূর্বাভাস জারি করেছে, যা থেকে বাংলাদেশের জন্য কিছু শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দপ্তর এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (Centers for Disease Control and Prevention বা CDC) যৌথভাবে তাপপ্রবাহের ঝুঁকিগুলো নিরূপণ করে। তারা তাপমাত্রার চরম অবস্থা, এর স্থায়িত্ব এবং সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনা করে পূর্বাভাস তৈরি করে।
সিডিসি’র পুরনো তথ্য ব্যবহার করে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপর তাপপ্রবাহের প্রভাব কেমন হতে পারে, সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করা হয়। এই পূর্বাভাসগুলোর মাধ্যমে জানা যায়, কোন কোন অঞ্চলে কতজন মানুষ তীব্র গরমের ঝুঁকিতে রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, গত গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৬ কোটির বেশি মানুষ তাপ সতর্কতা এবং অন্যান্য সতর্কতার মধ্যে জীবন কাটিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপপ্রবাহ এখন আরও বেশি সাধারণ, তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। রাতের বেলাতেও তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে না, যা মানুষকে স্বস্তি দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
ফলে, গরমের কারণে রেকর্ড ভাঙা তাপমাত্রাও দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া দপ্তর প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার সম্ভাব্য সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখতে পারি। বাংলাদেশেও গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধি একটি গুরুতর সমস্যা।
তাপপ্রবাহের কারণে হিট স্ট্রোক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো দেখা যায়। এই পরিস্থিতিতে, জনগণের সুরক্ষার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
প্রথমত, আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস এবং সতর্কবার্তাগুলো সময়মতো প্রচার করা দরকার। জনগণকে তাপপ্রবাহ সম্পর্কে সচেতন করতে প্রচার প্রচারণা চালানো যেতে পারে।
ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী, যেমন বয়স্ক ব্যক্তি এবং শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা যেতে পারে।
শহরে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে মানুষ গরম থেকে বাঁচতে পারবে।
তৃতীয়ত, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, বাংলাদেশ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি সমন্বিতভাবে কাজ করে, তাহলে আমরা তাপপ্রবাহের ঝুঁকি কমাতে এবং জনগণের জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হব।
তথ্য সূত্র: CNN