যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওজি মিডিয়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা কার্লোস ওয়াটসনের কারাদণ্ড মওকুফ করেছেন। শুক্রবার, ওয়াটসনের প্রায় দশ বছরের কারাদণ্ড শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আর্থিক প্রতারণার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরেই তার এই সাজা হয়।
ওজি মিডিয়া মূলত একটি স্টার্টআপ কোম্পানি ছিল, যা সংবাদ পরিবেশন ও সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করত। ২০১৬ সালে কোম্পানিটি যাত্রা শুরু করে এবং দ্রুত পরিচিতি লাভ করে।
কিন্তু পরবর্তীতে, মিডিয়া জগতে অস্থিরতার মধ্যে, এই কোম্পানির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ওয়াটসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এবং তাদের ভুল তথ্য দিয়ে আকৃষ্ট করেছেন।
আদালতে বিচার চলাকালীন সময়ে, ওয়াটসন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। তিনি দাবি করেন, তাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
তবে বিচারক তার যুক্তিতে রাজি হননি। বিচারক এরিক কোমিটি, যিনি ট্রাম্পের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত, ওয়াটসনের “অসাধারণ প্রতারণামূলক” কাজের তীব্র নিন্দা করেন।
কার্লোস ওয়াটসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্ট্যানফোর্ড ল স্কুল থেকে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ওয়াল স্ট্রিটে কাজ করার পাশাপাশি তিনি সিএনএন এবং এমএসএনবিসি-তে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন।
ওজি মিডিয়া ছিল তার দ্বিতীয় উদ্যোগ। এর আগে তিনি একটি শিক্ষা বিষয়ক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে বিক্রি করেছিলেন।
ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিতর্কিত ব্যক্তিদের সাজা কমানোর ক্ষেত্রে বেশ সক্রিয় ছিলেন। তিনি মনে করেন, অনেক ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের মাধ্যমে অন্যায় হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি তিনি সহানুভূতিশীল।
ওয়াটসনের সাজা কমানোর এই সিদ্ধান্তও সেই ধারাবাহিকতার অংশ। একই দিনে, ট্রাম্প আরও কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাজা কমান।
তাদের মধ্যে ছিলেন ইলেক্ট্রিক ভেহিক্যাল কোম্পানি নিকোলার প্রতিষ্ঠাতা ট্রেভর মিল্টন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ বিটমেক্সের তিনজন প্রতিষ্ঠাতা।
বিটমেক্সকে এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম ভাঙার দায়ে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়েছিল (যা বর্তমানে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১০০ কোটি টাকার সমান)।
ওজি মিডিয়া শুরুতে “নতুন এবং আধুনিক” দৃষ্টিভঙ্গির কথা বললেও, পরে তারা তাদের আর্থিক হিসাব নিয়ে সমস্যায় পড়ে। ২০২১ সালে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পর কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যায়।
প্রতিবেদনে তাদের দর্শক ও পাঠক সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল এবং আর্থিক প্রতারণারও ইঙ্গিত ছিল।
এই ঘটনার মাধ্যমে, উন্নত বিশ্বে আর্থিক প্রতারণার বিষয়টি কিভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জীবনে প্রভাব ফেলে, তা আবারও সামনে এসেছে। একই সঙ্গে, রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে বিচার বিভাগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের বিষয়টিও নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস