মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইলেক্ট্রিক ভেহিকেল প্রস্তুতকারক সংস্থা নিকোলার প্রতিষ্ঠাতা ট্রেভর মিল্টনকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। গত বছর প্রতারণার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর মিল্টনকে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
প্রেসিডেন্টের এই ক্ষমার ফলে, প্রতারিত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ বাবদ মিল্টনের উপর থাকা কয়েক কোটি ডলার পরিশোধের দায়ও হয়তো বাতিল হয়ে যাবে।
জানা গেছে, নির্বাচনের এক মাস আগেও মিল্টন ও তাঁর স্ত্রী ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন তহবিলে ১৮ লক্ষ ডলারেরও বেশি অনুদান দিয়েছিলেন। প্রসিকিউটরদের মতে, মিল্টন তাঁর প্রযুক্তির সক্ষমতা বাড়িয়ে দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
উদাহরণস্বরূপ, একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ট্রায়াল ট্রাক মরুভূমির রাস্তা দিয়ে চলছে, কিন্তু সেটি ছিল অচল একটি মডেল, যা আসলে পাহাড় থেকে গড়িয়ে নামানো হয়েছিল।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে। তিনি বলেছেন, মিল্টনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কারণ তিনি প্রেসিডেন্টকে সমর্থন করেছিলেন। ট্রাম্প আরও যোগ করেন, মিল্টন কোনো ভুল করেননি এবং যারা তাঁর বিরুদ্ধে মামলা এনেছিল, তারা “একটি নিষ্ঠুর দল”।
মিল্টনের মামলা পরিচালনার সময় ট্রাম্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দু’জন আইনজীবী তাঁর পক্ষে ছিলেন: মার্ক মুকেসি, যিনি ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং ব্র্যাড বন্ডি, যিনি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ট্রাম্পের মনোনয়ন পেয়েছিলেন এমন পাম বন্ডির ভাই।
একই দিনে, ওজি মিডিয়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা কার্লোস ওয়াটসনের কারাদণ্ডও মওকুফ করা হয়। উল্লেখ্য, আর্থিক ষড়যন্ত্রের একটি মামলায় প্রায় দশ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করার কথা ছিল তাঁর।
এছাড়াও, ট্রাম্প ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসায়ী আর্থার হেইস, বেঞ্জামিন ডেলো এবং স্যামুয়েল রিডকেও ক্ষমা করেছেন। এই ব্যবসায়ীরা বিটমেক্স নামে একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যাদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং আইন লঙ্ঘনের দায়ে ১০০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে হয়েছিল।
নিকোলা, একসময় ওয়াল স্ট্রিটে আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি স্টার্টআপ ছিল। কিন্তু কেলেঙ্কারির কারণে ফেব্রুয়ারিতে দেউলিয়া সুরক্ষার জন্য আবেদন করে। প্রসিকিউটররা মিল্টনকে একজন প্রতারক হিসেবে চিত্রিত করেছেন, যিনি একটি বিপ্লবী ট্রাক তৈরির মিথ্যা দাবি করেছিলেন।
যদিও, সেই ট্রাকটি ছিল জেনারেল মোটরসের তৈরি, যার উপর নিকোলার লোগো লাগানো ছিল। নিকোলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেন যে, মিল্টন বিনিয়োগকারীদের কাছে তাঁর প্রকল্প উপস্থাপনের সময় “অতিরঞ্জন করতেন”।
২০২০ সালে প্রতারণার অভিযোগ উঠলে মিল্টন পদত্যাগ করেন এবং এর ফলে নিকোলার শেয়ারের দাম দ্রুত কমতে শুরু করে। মিল্টনের মিথ্যা দাবির কারণে বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হন।
কোম্পানিটি পরে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (SEC) ১২৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দেয়, যদিও তারা কোনো ভুল স্বীকার করেনি। (উল্লেখ্য, এসইসি-এর ধারণাটি বাংলাদেশের বিএসইসি-এর মতোই)।
এই ঘটনায় নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের মার্কিন অ্যাটর্নি অফিসের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে, মিল্টনের শাস্তির সময় ইউএস অ্যাটর্নি ডেমিয়ান উইলিয়ামস বলেছিলেন, “ট্রেভর মিল্টন বারবার বিনিয়োগকারীদের মিথ্যা বলেছেন – সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, টিভিতে, পডকাস্টে এবং সংবাদ মাধ্যমে।
স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতা এবং কর্পোরেট কর্মকর্তাদের জন্য আজকের এই রায় একটি সতর্কবার্তা – ‘ফেইক ইট টিল ইউ মেক ইট’ (যা নেই, তা-ই আছে দেখাও) প্রতারণার অজুহাত হতে পারে না, এবং যদি আপনি আপনার বিনিয়োগকারীদের মিথ্যা বলেন, তবে আপনাকে এর চরম মূল্য দিতে হবে।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।