যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে মন্দা, বিশ্ব অর্থনীতিতে উদ্বেগের ছায়া।
নিউ ইয়র্ক (এপি) – সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে বড় ধরনের দরপতন দেখা গেছে। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, একদিকে যেমন বাড়ছে মূল্যস্ফীতি, তেমনই বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ভোক্তাদের মধ্যে ব্যয় করার প্রবণতা কমে যাওয়ায় অর্থনীতির গতি কমে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে এর কী প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়েও অনেকে উদ্বিগ্ন।
শুক্রবার (গত সপ্তাহে) ওয়াল স্ট্রিটে শেয়ারের দামে বড় পতন হয়, যা গত দুই বছরের মধ্যে অন্যতম খারাপ দিন ছিল। এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক ২ শতাংশের বেশি কমেছে।
ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচক ৭১৫ পয়েন্ট বা ১.৭ শতাংশ এবং নাসডাক কম্পোজিট সূচক ২.৭ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন ভোক্তারা তাদের ভবিষ্যৎ আর্থিক অবস্থা নিয়ে আরও বেশি হতাশ হচ্ছেন। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা গেছে, দুই-তৃতীয়াংশ আমেরিকান আগামী এক বছরে বেকারত্ব বাড়ার আশঙ্কা করছেন।
২০০৯ সালের পর এই সংখ্যাটি সর্বোচ্চ। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন অর্থনীতিতে একটা খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
ওয়াল স্ট্রিটের এই দরপতনের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। একদিকে যেমন মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, তেমনই ভোক্তাদের মধ্যে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি এই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শুল্কের কারণে মার্কিন কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে পারে, যা সামগ্রিক অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
শেয়ার বাজারে দরপতনের কারণে লুলু লেমন অ্যাথেলেটিকা, টমি বাহামা, এবং ডেল্টা এয়ারলাইন্সের মতো কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এমনকি ভালো মুনাফা করা সত্ত্বেও অনেক প্রযুক্তি কোম্পানির শেয়ারের দামও কমেছে।
মার্কিন অর্থনীতির এই অস্থিরতা বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, জাপানের অটোমোবাইল কোম্পানি হোন্ডা মোটর এবং দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই মোটরের শেয়ারের দাম কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হলো ‘স্ট্যাগফ্লেশন’। অর্থাৎ, যখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে এবং একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতিও বাড়ে।
এমনটা হলে নীতিনির্ধারকদের জন্য পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব কেমন হবে?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সহযোগী।
সেখানকার অর্থনৈতিক মন্দা বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
তবে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ভবিষ্যতে যাতে কোনো খারাপ পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে।
শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে কত সময় লাগবে, তা বলা কঠিন। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিনিয়োগকারীদের এখন সতর্ক থাকতে হবে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস