শিরোনাম: লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে বিপর্যয়, বিশ্বজুড়ে বিমান চলাচলে বিশৃঙ্খলা, বাংলাদেশি যাত্রীদের উপর প্রভাব
লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর, যা বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত, সেখানে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে শুক্রবার ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। বিমানবন্দরের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ায় হাজার হাজার ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে বিশ্বজুড়ে।
এই ঘটনার জেরে বাংলাদেশি যাত্রীসহ অন্যান্য দেশের ভ্রমণকারীরাও চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
জানা গেছে, বিমানবন্দরের কাছে একটি অগ্নিকাণ্ডের কারণে এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট সৃষ্টি হয়। এর ফলে বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কয়েক দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হিথরোর মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা কিছু ফ্লাইট পুনরায় চালুর চেষ্টা করছেন এবং শনিবার থেকে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করার আশা করছেন। তবে, যাত্রীদের বিমানবন্দরে না যাওয়ার এবং তাদের ফ্লাইটের বিষয়ে জানতে এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
হিথরো বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৯১,০০০ যাত্রী চলাচল করে। এই মুহূর্তে সেখানে প্রায় ৯০টি ভিন্ন এয়ারলাইন্স তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।
এর মধ্যে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এবং ভার্জিন আটলান্টিকের মতো বড় এয়ারলাইন্সও রয়েছে। বিমানবন্দরের মুখপাত্র আরও জানিয়েছেন, হিথরোর কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে যথেষ্ট সময় লাগবে, কারণ এটি একটি ছোট শহরের মতো বিশাল পরিমাণ বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার সময় অন্তত ১২০টি বিমান লন্ডনের দিকে আসছিল। অনেক ফ্লাইটকে হয় অন্য বিমানবন্দরে অবতরণ করতে হয়েছে, অথবা যাত্রা বাতিল করতে হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনার জেরে বিমান সংস্থাগুলোর প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ২৭৫ থেকে ৩৮৫ কোটি বাংলাদেশি টাকা) ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
এর কারণ হিসেবে বিমানগুলোর শিডিউল বিপর্যয়, ক্রু এবং যাত্রীদের নতুন করে পুনর্বিন্যাস করা এবং অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যয়ের মতো বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
লন্ডনভিত্তিক একটি ভ্রমণ পরামর্শক সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পল চার্লস মনে করেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এর ফলে যাত্রী এবং এয়ারলাইন্সগুলোর উপর বিশাল আর্থিক চাপ সৃষ্টি হবে।
এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স তাদের যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অনেক এয়ারলাইন্স তাদের যাত্রীদের ফ্লাইট পরিবর্তন, রি-শিডিউলিং অথবা পুরো টিকিটের মূল্য ফেরত নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে।
ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স তাদের ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদের জন্য আমস্টারডাম, ব্রাসেলস, প্যারিস অথবা এডিনবার্গগামী ফ্লাইটে টিকিট পরিবর্তনের সুযোগ দিচ্ছে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স তাদের লন্ডনগামী তিনটি ফ্লাইট হয় বাতিল করেছে, অথবা ফ্রাঙ্কফুর্ট বা প্যারিসে ডাইভার্ট করেছে।
যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর গ্যাটউইক এবং আয়ারল্যান্ডের শ্যানন বিমানবন্দরেও কিছু ফ্লাইট ডাইভার্ট করা হয়েছে। এছাড়া, স্বল্প খরচে বিমান পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা রায়ানএয়ার ডাবলিন ও লন্ডন স্টানস্টেডের মধ্যে আটটি “উদ্ধারকারী ফ্লাইট” পরিচালনা করছে, যা ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদের জন্য সহায়ক হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের-নওয়ের বাসিন্দা কিম মিক্কেল স্কিব্রেকের একটি ডেল্টা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপলিস থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার পর তিন ঘণ্টা পর আবার ফেরত যায়। তিনি জানান, “অবশ্যই সবাই হতাশ ছিল, তবে এখন পরিস্থিতি শান্ত।”
তিনি যত দ্রুত সম্ভব লন্ডনে যাওয়ার জন্য অন্য ফ্লাইটের অপেক্ষায় আছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিথরোর মতো ব্যস্ত বিমানবন্দরে এমন ঘটনা ভ্রমণকারীদের জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা।
বিশেষ করে, যারা জরুরি প্রয়োজনে অথবা ব্যবসার উদ্দেশ্যে নিয়মিত বিদেশে ভ্রমণ করেন, তাদের জন্য এই পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগের। একইসঙ্গে, এই ঘটনার ফলে বিশ্বজুড়ে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং জরুরি অবস্থার মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন