যুক্তরাষ্ট্র চীনসহ বিভিন্ন দেশের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর নতুন করে রফতানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলছে, সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য প্রযুক্তি সংগ্রহের চেষ্টা করায় তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা কোম্পানিগুলোর মধ্যে চীনের ৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। খবরটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
মার্কিন বাণিজ্য দপ্তর বলছে, এই কোম্পানিগুলো অত্যাধুনিক সুপারকম্পিউটিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং কোয়ান্টাম প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি পেতে চেয়েছিল। শুধু চীন নয়, তাইওয়ান, ইরান, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতেরও কিছু কোম্পানি এই নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে চীনের শীর্ষস্থানীয় ক্লাউড কম্পিউটিং ও ডেটা সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইনস্পুর গ্রুপের ৬টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালে এই কোম্পানিটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘এন্ট্রিটি লিস্ট’-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
তালিকায় যুক্ত হয়েছে বেইজিং একাডেমি অফ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (বিএএআই)-এর নামও।
বেইজিং একাডেমি অফ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বলেছে, “আমরা বিস্মিত যে একটি বেসরকারি অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে ‘এন্ট্রিটি লিস্ট’-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই এই ভুল সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছি এবং সংশ্লিষ্ট মার্কিন বিভাগকে এটি প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাচ্ছি।
মার্কিন কর্তৃপক্ষের মতে, বিএএআই এবং বেইজিং ইনোভেশন উইজডম টেকনোলজি কোং সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য উন্নত কম্পিউটার চিপ তৈরি করেছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করে বলেছে, রফতানি নিয়ন্ত্রণ একটি অপব্যবহার, যা চীনা কোম্পানিগুলোকে “অন্যায়ভাবে দমন” করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কুও জিয়াকুন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এটি আন্তর্জাতিক আইন ও সম্পর্কের মৌলিক নীতিগুলোর গুরুতর লঙ্ঘন। এর ফলে কোম্পানিগুলোর অধিকার ও স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।
চীন এর তীব্র বিরোধিতা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য হলো চীনের দ্রুতগতির ‘এক্সাস্কেল’ সুপারকম্পিউটার তৈরি, হাইপারসনিক অস্ত্র তৈরি এবং অন্যান্য সংবেদনশীল প্রযুক্তির বিকাশে বাধা দেওয়া।
এছাড়াও, দক্ষিণ আফ্রিকার একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে চীনা সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া থেকে বিরত রাখা, ইরানের সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহে বাধা দেওয়া এবং ঝুঁকিপূর্ণ পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়াকে কঠিন করাই এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর আরও জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বিদেশি প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য পুনরায় রফতানি করতে পারবে না।
এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হলো, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর আগে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছিলেন।
চীনও এর জবাবে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বিভিন্ন মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে। এমনকি, গুগল-এর বিরুদ্ধে একচেটিয়া ব্যবসার অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করেছে তারা।
চীন একইসঙ্গে তাদের নিজস্ব নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস