টায়ারের ধুলো: মাছ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এক নতুন হুমকি?
ঢাকা শহরের চারপাশে, গাড়ির আনাগোনা লেগেই আছে। ব্যস্ত রাস্তায় অবিরাম ছুটে চলা গাড়ির চাকার ঘর্ষণে নির্গত হচ্ছে সূক্ষ্ম কণা, যা আমরা খালি চোখে দেখি না।
কিন্তু এই অদৃশ্য ধুলো, যা টায়ারের ক্ষয় থেকে আসে, তা আমাদের পরিবেশের জন্য এক নীরব ঘাতক হয়ে উঠছে। সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা এই টায়ারের ধুলোর মধ্যে থাকা একটি রাসায়নিক, ৬PPD-কুইনোন (6PPD-quinone), আবিষ্কার করেছেন, যা জলজ জীবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, এই রাসায়নিকটি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের নদী ও খাল-বিলের পানিতে মিশে সেখানকার মাছের জীবনহানি ঘটাচ্ছে। বিশেষ করে কোহো স্যামন মাছের (Coho salmon) জীবনচক্রের উপর এর মারাত্মক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
মাছগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ছে এবং মারা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই কুইনোন মাছের শরীরে প্রবেশ করার ৪৫ মিনিটের মধ্যেই তাদের মধ্যে অসুস্থতার লক্ষণ দেখা যায়।
কিন্তু এই রাসায়নিক শুধু মাছের জন্যই ক্ষতিকর নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি মানুষের শরীরেও প্রবেশ করতে পারে।
মানুষের প্রস্রাব, রক্ত এবং মেরুরজ্জুতেও এই রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যদিও মানুষের উপর এর সরাসরি ক্ষতিকর প্রভাব এখনো সেভাবে দেখা যায়নি, তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু জানার বাকি আছে।
আসলে, টায়ারের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত ৬PPD নামক রাসায়নিকটি টায়ারের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সহায়ক। কিন্তু টায়ার ঘর্ষণের ফলে এই ৬PPD বাতাসে মিশে যায় এবং বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে ৬PPD-কুইনোন তৈরি করে।
বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে এই কুইনোন নদী ও খাল-বিলে প্রবেশ করে, যা জলজ জীবন ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যাটি বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। উন্নত দেশগুলোতে এর প্রভাব ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশেও গাড়ির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ফলে, টায়ারের ধুলোর দূষণ এখানেও একটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
এ বিষয়ে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিজ্ঞানীরা ৬PPD-এর বিকল্প রাসায়নিক অনুসন্ধানের চেষ্টা করছেন। একইসঙ্গে, বৃষ্টির পানিকে পরিশোধিত করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে, যাতে দূষিত পানি সরাসরি নদী বা জলাশয়ে প্রবেশ করতে না পারে।
পরিবেশ সুরক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক