যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য রং নিষিদ্ধ করার চেষ্টা: বাংলাদেশের জন্য এর অর্থ কী?
যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকের বেশি অঙ্গরাজ্যে খাদ্য দ্রব্যে ব্যবহৃত কিছু কৃত্রিম রং (food dyes) নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিশুদের স্বাস্থ্য, বিশেষ করে তাদের মনোযোগ এবং শেখার ক্ষমতার ওপর এই রংগুলির ক্ষতিকর প্রভাবের উদ্বেগের কারণেই এই পদক্ষেপ। এছাড়াও, কিছু প্রাণীর ওপর ক্যান্সারের ঝুঁকি দেখা দেওয়ায় এই রংগুলো নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
পশ্চিম ভার্জিনিয়ার আইনপ্রণেতা অ্যাডাম বার্কহ্যামারের অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি খেয়াল করেন যে, তাঁর ছেলের খাদ্য তালিকা থেকে এই রং যুক্ত খাবার বাদ দেওয়ার ফলে তার আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। এই ঘটনার পরই তিনি রাজ্যে একটি বিল উত্থাপন করেন, যেখানে বিদ্যালয়গুলোতে এবং পরবর্তীতে রাজ্যে বিক্রি হওয়া খাবারে এই রং ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাব করা হয়। এই বিলটি বর্তমানে আইনে পরিণত হয়েছে।
পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গভর্নর প্যাট্রিক মরিসি বলেছেন, “ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য খাদ্য থেকে সরিয়ে আমরা আমাদের নাগরিকদের স্বাস্থ্য উন্নয়নে এবং শিশুদের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ক্ষেত্রে সুরক্ষা দিতে পদক্ষেপ নিচ্ছি।
ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যেও খাদ্য রং নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে। তারা ইতোমধ্যে লাল রং-৩ (Red Dye No. 3) সহ আরও কয়েকটি সাধারণ রং বিদ্যালয়ের খাবারে ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ) ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে লাল রং-৩ খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়, যা ২০২৭ সাল থেকে কার্যকর হবে। এছাড়া, ভার্জিনিয়াতেও বিদ্যালয়ের খাবারে খাদ্য রং ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আইন পাস হয়েছে, যা ২০২৭ সাল থেকে কার্যকর হবে।
বর্তমানে প্রায় ২৪টি অঙ্গরাজ্যে খাদ্য রং এবং অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য নিষিদ্ধ করার চেষ্টা চলছে। পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ‘এনভায়রনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপ’-এর তথ্য অনুযায়ী, এটি খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করার একটি দ্বি-দলীয় প্রচেষ্টা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যে ব্যবহৃত এই কৃত্রিম রংগুলোর কারণে শিশুদের মধ্যে মনোযোগের অভাব, অস্থিরতা এবং ঘুমের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও, কিছু রং পশুর শরীরে টিউমার এবং ক্যান্সারের কারণ হতে পারে বলে জানা গেছে।
তাহলে, খাদ্য রং এড়িয়ে চলবেন কীভাবে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্য রং এড়িয়ে চলতে হলে খাদ্য ও পানীয় কেনার সময় উপাদান তালিকা ভালোভাবে দেখতে হবে। বিশেষ করে, প্রক্রিয়াজাত খাবার (ultra-processed food) ও পানীয়তে এসব রং বেশি থাকে। উপাদান তালিকায় রংগুলি বিভিন্ন নামে উল্লেখ করা হয়, যেমন: লাল রং ৪০, হলুদ রং ৫, নীল রং ১ ইত্যাদি।
যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য রং নিয়ে এই ধরনের পদক্ষেপগুলি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হতে পারে। কারণ, বিশ্বায়নের এই যুগে আমাদের দেশেও বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবারের ব্যবহার বাড়ছে। তাই, খাদ্য নিরাপত্তা এবং উপাদান সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
খাদ্য রং নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া পদক্ষেপগুলো আমাদের দেশেও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনার জন্ম দিতে পারে। ভোক্তাদের সচেতনতা এবং সরকারের উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা খাদ্য নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে পারি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন