নতুন একটি আলোচনার ধরন: ‘বুমেরাস্কার’ – আত্ম-প্রচারের কৌশল?
কথা বলার সময়ে কিছু মানুষের এমন একটা প্রবণতা দেখা যায় যে, তারা অন্যকে প্রশ্ন করে, কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তরের থেকে বেশি মনোযোগ দেয় নিজেদের কথা বলার দিকে। ব্যাপারটা অনেকটা এমন, যেন প্রশ্নটা একটা ছুঁতো, নিজের গল্প শোনানোর সুযোগ তৈরি করা।
মনোবিজ্ঞানীরা এই ধরনের আচরণকে ‘বুমেরাস্কার’ বলছেন। বুমেরাস্কার আসলে এক ধরনের কথোপকথনের কৌশল, যেখানে একজন ব্যক্তি প্রথমে কাউকে প্রশ্ন করে, তারপর সেই উত্তরের সুযোগ নিয়ে নিজের কথাই বলতে শুরু করে।
যেমন ধরুন, কেউ আপনাকে জিজ্ঞেস করলো, “আজ অফিসের কাজ কেমন চলছে?” আপনি হয়তো নিজের কাজ সম্পর্কে কিছু বলতে শুরু করলেন, কিন্তু তিনি আপনার কথা শোনার বদলে, অফিসের সাফল্যের গল্প বলতে শুরু করলেন।
অথবা, “আজ মার্কেটে কি কিনতে গিয়েছিলে?” এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি যখন আপনার কেনাকাটার কথা বলছেন, তখন তিনি তার কেনাকাটার বিশাল তালিকা নিয়ে হাজির হলেন।
এই ‘বুমেরাস্কার’ শব্দটা হয়তো নতুন, কিন্তু এই ধরনের আচরণ সমাজের মানুষের মধ্যে বহু পুরনো। সম্প্রতি, জার্নাল অফ আমেরিকান সাইকোলজি’তে প্রকাশিত একটি গবেষণায় এই বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা এই ধরনের কথোপকথন করেন, তারা নিজেদের খুব মিশুক ও আকর্ষণীয় মনে করেন। কিন্তু যারা শোনেন, তাদের কাছে এই ধরনের মানুষরা আত্ম-কেন্দ্রিক এবং অকৃত্রিম বলে মনে হয়।
আসলে, মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময়, তাদের কথা শোনাটা খুব জরুরি। আপনি যখন কারো সঙ্গে কথা বলছেন, তখন তাদের কথায় মনোযোগ দিন, তাদের অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করুন।
নিজের কথা বলার আগে, অপরকে ভালোভাবে শোনার চেষ্টা করুন।
আমাদের সমাজে, বিশেষ করে পারিবারিক অনুষ্ঠানে বা বন্ধুদের আড্ডায়, এই ধরনের আচরণ প্রায়ই দেখা যায়। কেউ হয়তো তার নতুন গাড়ির গল্প বলছেন, আর অন্যজন শোনাতে শুরু করলেন তার বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।
অথবা, চাকরির বাজারের কথা উঠতেই, একজন তার সফল ক্যারিয়ারের ফিরিস্তি দিতে শুরু করলেন। এইসব ক্ষেত্রে, বুমেরাস্কারের প্রবণতা দেখা যায়।
তাহলে, কিভাবে এই ধরনের আচরণ এড়ানো যায়? প্রথমত, অন্যের কথা মন দিয়ে শুনুন। তাদের অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করুন।
দ্বিতীয়ত, নিজের কথা বলার আগে, অন্যদের সুযোগ দিন। আত্ম-প্রচারের পরিবর্তে, অন্যদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে মিশতে চেষ্টা করুন।
আপনি যদি সত্যিই অন্যদের কথা শুনতে আগ্রহী হন, তাহলে দেখবেন, আলোচনা আরও গভীর ও অর্থপূর্ণ হচ্ছে। অন্যের প্রতি সহানুভূতি এবং মনোযোগ—এই দুটো জিনিসই একটি ভালো কথোপকথনের চাবিকাঠি।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান