**ক্যামব্রিজ বনাম অক্সফোর্ড: শিক্ষকতার যোগ্যতা নিয়ে বোট রেসে বিতর্কের ঝড়**
আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী বোট রেসে (নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা) অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া নিয়ে গভীর বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। কেমব্রিজের তিনজন শিক্ষার্থীর শিক্ষকতার যোগ্যতা (Postgraduate Certificate in Education বা PGCE) নিয়ে আপত্তি তুলেছে অক্সফোর্ড।
তাদের দাবি, এই শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ কোনো “ডিগ্রি” নয়। আর তাই, এই শিক্ষার্থীদের রেসে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।
বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আইনি পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। সেই পরামর্শ অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। জানা গেছে, কেমব্রিজের হয়ে অংশ নিতে যাওয়া ওই তিনজন শিক্ষার্থী হলেন ম্যাট হেইউড, মলি ফক্সেল এবং কেট ক্রাউলি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বোট ক্লাব (OUBC) কর্তৃপক্ষের আপত্তির পরেই এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। তারা জানায়, পিজিইসি (PGCE) হলো একটি ডিপ্লোমা, কোনো ডিগ্রি নয়।
যদিও, কেমব্রিজ কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, এই প্রশিক্ষণ কোর্সটি শিক্ষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর মাধ্যমে তারা শিক্ষকতার যোগ্যতা অর্জন করেন। এই বিতর্কের জেরে শেষ পর্যন্ত রেসে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও ওই তিন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে বাধার সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে আইনি পরামর্শ নেওয়া হয়েছে এবং তাতে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আইনজীবীদের মতে, এই সিদ্ধান্তের পেছনে কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার, সিদ্ধান্তের বিষয়বস্তু এবং প্রক্রিয়াগত কিছু দুর্বলতা রয়েছে।
তবে, বর্তমানে কেমব্রিজ দল সরাসরি কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে না। কারণ, তাদের মতে, এতে দলের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তবে, তারা ভবিষ্যতের জন্য সব বিকল্প খোলা রেখেছে।
এদিকে, এই বিতর্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ওই তিন শিক্ষার্থী। তারা দলের সাফল্যের কথা ভেবে আপাতত ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করেছেন।
এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন অলিম্পিক জয়ী ইমোজেন গ্রান্ট। ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০২২ সালে কেমব্রিজের হয়ে মহিলাদের বোট রেসে জয়ী এই খেলোয়াড়ের মতে, “শিক্ষকদের প্রতি এটা চরম অবমাননাকর এবং অক্সফোর্ডের একটি হতাশাজনক কৌশল।”
তাঁর মতে, এই সিদ্ধান্তের কারণে নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ, সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিজিইসি কোর্সে ভর্তি হওয়া ৬8 শতাংশ শিক্ষার্থীই নারী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের বিতর্কের ফলে খেলাধুলার জগতে যোগ্যতার মানদণ্ড নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে পারে। একইসঙ্গে, এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ এবং সামগ্রিকভাবে খেলাধুলার পরিবেশের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান