বার্থা বেঞ্জ: প্রথম সড়ক অভিযানের নেপথ্যে থাকা অগ্রণী নারী।
আজকের গল্পটি একজন অসাধারণ নারীর, যিনি শুধু তার স্বামীর উদ্ভাবনকে সফল করতেই নয়, বরং বিশ্বকে নতুন এক দিগন্তের সন্ধান দিতে এক দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
তিনি হলেন বার্তার বেঞ্জ।
তার স্বামী কার্ল বেঞ্জ ছিলেন একজন জার্মান প্রকৌশলী, যিনি পরবর্তীতে মার্সিডিজ-বেঞ্জ গাড়ির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত হন।
১৮৮৮ সালের কথা, যখন কার্ল বেঞ্জ তার নতুন “প্যাটেন্ট মোটর কার” তৈরি করেছেন, কিন্তু জনসাধারণের মধ্যে এর গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়নি।
মানুষজন তখনও এই গ্যাস ইঞ্জিন চালিত গাড়ির ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন।
তখনই বার্তার বেঞ্জ এগিয়ে আসেন।
স্বামীর অজান্তে, তিনি তার দুই কিশোর পুত্র, ইউজিন এবং রিচার্ডকে সঙ্গে নিয়ে এই গাড়ি চালিয়ে মানহাইম শহর থেকে ফোরজহাইম পর্যন্ত যাত্রা করেন।
তখনকার সময়ে এই পথ পাড়ি দেওয়া সহজ ছিল না।
আজকের দিনে হয়তো এক ঘণ্টার পথ, কিন্তু সে সময়ে রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি ছিল খুবই কঠিন।
এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার মাধ্যমে বার্তার বেঞ্জ প্রমাণ করেন যে, তার স্বামীর তৈরি করা গাড়ি নির্ভরযোগ্য এবং দীর্ঘ ভ্রমণের উপযুক্ত।
গন্তব্যে পৌঁছে তিনি কার্ল বেঞ্জকে টেলিগ্রাম করে জানান, তার “প্যাটেন্ট মোটর কার”-এর প্রথম দীর্ঘ-দূরত্বের যাত্রা সফল হয়েছে।
বার্তার এই পদক্ষেপের ফলে দ্রুতই খবর ছড়িয়ে পড়ে, কারণ “ধোঁয়াহীন, শব্দ করা, ঘোড়াবিহীন গাড়িতে” এক নারী ও তার দুই ছেলের এই অভিযান অনেকের কাছেই ছিল বিস্ময়কর।
অনেকে হয়তো ভেবেছিলেন, এটা শয়তানের কাজ!
কিন্তু না, এটি ছিল একজন সাহসী নারীর দূরদর্শীতার ফল।
বার্তার এই দৃঢ়তা এবং আত্মবিশ্বাসের কারণেই অটোমোবাইল, অর্থাৎ গাড়ির ধারণা ভবিষ্যতের দিকে আরও দ্রুত এগিয়ে যায়।
কার্ল বেঞ্জ তার আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, “যখন জীবন নামক ছোট জাহাজটি ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তখন আমার পাশে একজনই ছিলেন।
তিনি আমার স্ত্রী।
সাহসিকতার সঙ্গে তিনি নতুন করে আশার পাল তুলেছিলেন।”
বার্তার বেঞ্জের এই দুঃসাহসিক পদক্ষেপ শুধু একটি ভ্রমণ ছিল না, বরং এটি ছিল একটি বিপ্লব।
তার এই উদ্যোগের ফলেই মানুষজন গাড়ির সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে পারে এবং এর ব্যবহার বাড়তে শুরু করে।
বর্তমানে, বাংলাদেশের রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে, যা একসময় হয়তো কল্পনারও বাইরে ছিল।
বার্তার বেঞ্জের সেই সাহস এবং উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার কারণেই আজকের এই আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল এন্ড লেজার