ফিফার ক্লাব বিশ্বকাপ: ১ বিলিয়ন ডলারের পুরস্কার, ফুটবলে নতুন মেরুকরণ?
বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা সম্প্রতি ক্লাব বিশ্বকাপের জন্য বিশাল অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করেছে – ১ বিলিয়ন ডলার। ফিফার এই পদক্ষেপ ফুটবল বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তবে এর পেছনের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অনেকের মতে, এটিকে বাণিজ্যিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে নেওয়া একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো এই মেগা টুর্নামেন্টের ঘোষণা করেন, যেখানে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। এই অর্থ বিতরণের পরিকল্পনা নিয়েই যত বিতর্ক।
ধারণা করা হচ্ছে, এই বিশাল অর্থের সিংহভাগ ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলোর হাতে যাবে, কারণ তারাই এই প্রতিযোগিতায় প্রধান শক্তি। ফলে, ফুটবল বিশ্বে বিদ্যমান আর্থিক বৈষম্য আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ফুটবল বিশ্লেষকদের মতে, এই ক্লাব বিশ্বকাপের ফলে ঘরোয়া লিগগুলোর গুরুত্ব কমে যেতে পারে। কারণ, অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলো বিশাল অঙ্কের অর্থ পাওয়ার লোভে দেশীয় লিগগুলোর প্রতি আগ্রহ হারাতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ক্লাব গ্রুপ পর্ব থেকে বাদও পরে, তাহলেও তারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ পেতে পারে, যা তাদের আর্থিক ভিত আরও শক্তিশালী করবে।
এই বিশাল অর্থের জোগান আসছে কোথা থেকে? জানা গেছে, সৌদি আরবের একটি সার্বভৌম তহবিল ডিএজেডএন (DAZN) নামক একটি সম্প্রচার সংস্থায় ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। পরবর্তীতে ডিএজেডএন ফিফাকে ক্লাব বিশ্বকাপের সম্প্রচার স্বত্ব বাবদ একই পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করে।
এরপর ফিফা সেই অর্থ ক্লাবগুলোর মধ্যে বিতরণ করবে। অর্থাৎ, অর্থের এই আদান-প্রদান একটি চক্রের মতো, যেখানে সৌদি বিনিয়োগকারীরাও জড়িত।
এই ঘটনার একটি সম্ভাব্য প্রভাব হলো, ক্লাবগুলো তাদের খেলোয়াড়দের আকৃষ্ট করার জন্য আরও বেশি অর্থ খরচ করতে পারবে, যা খেলোয়াড়দের বেতন এবং দলবদলের বাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। শোনা যাচ্ছে, এই টুর্নামেন্টে খেলার জন্য ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো-র মতো তারকা খেলোয়াড়ও দল বদলের কথা ভাবছেন।
তবে ফিফা বলছে, তারা এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে ফুটবলের উন্নতি এবং অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলোর মধ্যে সংহতি বাড়াতে চায়। তারা অংশগ্রহণ না করা ক্লাবগুলোর জন্য ২৫০ মিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল গঠনের কথাও ঘোষণা করেছে।
তবে সমালোচকদের মতে, এত বিশাল অর্থের প্রতিযোগিতায় এই ধরনের ক্ষুদ্র সহায়তা খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না।
ফুটবল বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ক্লাব বিশ্বকাপের ভবিষ্যৎ অনেকটাই অনিশ্চিত। খেলাটির বাণিজ্যিকীকরণের এই প্রবণতা একদিকে যেমন ফুটবলকে আরও জনপ্রিয় করতে পারে, তেমনিভাবে এর ঐতিহ্য এবং নৈতিকতাকে দুর্বল করে দিতে পারে। এখন দেখার বিষয়, ফিফার এই পদক্ষেপ ফুটবল বিশ্বে কতটা পরিবর্তন নিয়ে আসে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান