জাপানের প্রাকৃতিক উষ্ণ প্রস্রবণ, যা “ওনসেন” নামে পরিচিত, সেখানকার সংস্কৃতি এবং পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ওনসেনগুলি এখন অতিরিক্ত পর্যটনের কারণে পানির অভাবে ভুগছে।
বিষয়টি শুধু জাপানের জন্যই উদ্বেগের কারণ নয়, বরং এটি সারা বিশ্বের জন্য, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
জাপানে আসা পর্যটকদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। গত বছর, প্রায় ৩ কোটি ৬৮ লক্ষ বিদেশি পর্যটক দেশটিতে ভ্রমণ করেছেন।
এই বিপুল সংখ্যক পর্যটকের কারণে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের ওনসেনগুলোতে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, “উয়ারেসিনো” নামক একটি শহরে এর প্রভাব মারাত্মকভাবে পড়েছে।
কাইউশুর সাগা প্রিফেকচারের এই শহরটি তার সুন্দর ওনসেনগুলোর জন্য বিখ্যাত। এখানে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জাপানি ইন, ‘রিওকান’-গুলোতে পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে।
এখানকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ মহামারীর আগের তুলনায় বর্তমানে পর্যটকদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, যার ফলে রিওকান এবং অন্যান্য স্থাপনায় গরম পানির ব্যবহারও বৃদ্ধি পেয়েছে।
উয়ারেসিনোর পানির স্তর রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে। গত বছর, পানির স্তর ৩৯.৬ মিটারে নেমে আসে, যা চার বছর আগের তুলনায় ২০% কম।
মেয়র ডাইসুকে মুরাকামি এই সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি হোটেল ও রিওকানগুলোকে গভীর রাতে ব্যক্তিগত স্নানের ব্যবহার সীমিত করার পরামর্শ দিয়েছেন।
কারণ, অনেক পর্যটক, বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকরা, ব্যক্তিগত ওনসেন পছন্দ করেন। যেখানে তারা হোটেলের কক্ষে আলাদাভাবে গরম পানিতে স্নান করতে পারেন। এর ফলে পানির চাহিদাও বাড়ে, যা সরবরাহকে আরও কঠিন করে তোলে।
ওনসেনের পানি শুধুমাত্র স্নানের জন্যই ব্যবহৃত হয় না, বরং এর স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে। এই পানিতে স্নান করলে মানসিক চাপ কমে, পেশী শিথিল হয় এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়।
তবে সব গরম জলের পুকুরই ওনসেন নয়। জাপানে এই ঐতিহ্য রক্ষার জন্য কঠোর নিয়ম রয়েছে। ওনসেনের পানি অবশ্যই মাটির নিচ থেকে উঠে আসার সময় ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৭৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রা বজায় রাখতে হবে এবং এতে নির্দিষ্ট কিছু খনিজ পদার্থ থাকতে হবে।
শুধু উয়ারেসিনো নয়, “নিসেকো”-এর মতো অন্যান্য জনপ্রিয় ওনসেন এলাকাতেও পানির স্তর কমে যাচ্ছে। গত তিন বছরে এখানকার পানির স্তর ১৫ মিটার পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত পর্যটনের পাশাপাশি পুরনো পাইপ এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতাও পানি হ্রাসের কারণ। অনেক ওনসেন এলাকায় পুরনো স্থাপনার কারণে পানি অপচয় হয়।
পর্যটনের এই ক্রমবর্ধমান চাপ মোকাবিলায় কিছু শহর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। “গিনজান ওনসেন” শীতকালে পর্যটকদের আগমন সীমিত করেছে, যাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রায় কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।
জাপানের এই পরিস্থিতি থেকে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিতে পারি। পর্যটন একটি দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এর টেকসই ব্যবস্থাপনার দিকে নজর রাখা অপরিহার্য।
আমাদের দেশেও, বিশেষ করে সুন্দরবন বা কক্সবাজারের মতো পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পরিবেশ ও পর্যটনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে না পারলে, জাপানের মতো আমাদেরও একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন