যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ বিষয়ক সতর্কতা জারি করছে বিভিন্ন দেশ। বিদেশ ভ্রমণে যাওয়ার আগে আমরা সাধারণত গন্তব্য দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে ট্র্যাভেল অ্যাডভাইজরি বা ভ্রমণ বিষয়ক পরামর্শগুলো দেখে থাকি। কিন্তু অন্য দেশগুলো যে আমাদের দেশ সম্পর্কেও একই ধরনের সতর্কতা জারি করতে পারে, সে বিষয়টি হয়তো অনেকেরই অজানা।
সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নীতি পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ বিষয়ক নতুন নির্দেশনা দিয়েছে।
এই তালিকায় রয়েছে ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো। তাদের প্রধান উদ্বেগের বিষয়গুলো হলো লিঙ্গ পরিচয়, ভিসা জটিলতা এবং সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশের (জানুয়ারী ২০২৫) পরেই মূলত এই পরিবর্তনগুলো আসে। ওই আদেশে বলা হয়, একজন ব্যক্তির লিঙ্গ হয় পুরুষ, না হয় নারী। জন্মগত লিঙ্গ পরিবর্তন করে অন্য লিঙ্গে যাওয়ার ধারণা এতে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
এর ফলে, মার্কিন পাসপোর্ট ও ভিসার আবেদনে ‘X’ চিহ্নিত করে লিঙ্গ নির্ধারণের সুযোগও বাতিল করা হয়।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ নির্দেশনা হালনাগাদ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এখন লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য কেবল দুটি বিকল্প রয়েছে: পুরুষ অথবা নারী।
যদি কোনো ব্যক্তির পাসপোর্টে ‘X’ চিহ্নিত করা থাকে অথবা তিনি লিঙ্গ পরিবর্তন করে থাকেন, তবে ভ্রমণের আগে মার্কিন দূতাবাস থেকে পরামর্শ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এই পরামর্শ সেইসব ডেনিশ নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য, যাদের ভিসা অথবা ইলেকট্রনিক সিস্টেম ফর ট্রাভেল অথরাইজেশন (ESTA) -এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ESTA ভিসা মওকুফ প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের ভিসা ছাড়াই ৯০ দিন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি দেয়।
ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও একই ধরনের সতর্কতা জারি করেছে। তারা জানিয়েছে, আবেদনকারীর পাসপোর্টের লিঙ্গ যদি জন্মগত লিঙ্গের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হয়, তবে মার্কিন কর্তৃপক্ষ ESTA বা ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারে। জার্মানিও তাদের নাগরিকদের জন্য একই ধরনের নির্দেশনা দিয়েছে।
জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো তাদের নাগরিকদের জন্য নথিপত্র সংক্রান্ত জটিলতা এবং সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা নিয়েও সতর্ক করেছে। জার্মানির পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বৈধ ESTA অনুমোদন অথবা বৈধ ইউএস ভিসা থাকলেই যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে, তা নয়।
সীমান্ত কর্মকর্তারা প্রবেশের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তাই, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় রিটার্ন টিকিট (ফ্লাইট বুকিং)-এর প্রমাণ সঙ্গে রাখা উচিত। কোনো কারণে প্রবেশে অনুমতি না পাওয়া গেলে, এর বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।
জার্মানির দূতাবাসগুলোও এক্ষেত্রে কোনো সাহায্য করতে পারবে না। সম্প্রতি, তিনজন জার্মান নাগরিককে মার্কিন সীমান্তে আটক করে ফেরত পাঠানোর খবর পাওয়া গেছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরও তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ বিষয়ক পরামর্শ হালনাগাদ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ভ্রমণকারীদের অবশ্যই তাঁদের ভ্রমণের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটি বৈধ ESTA অথবা ভিসা থাকতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে কোনো ফৌজদারি রেকর্ড থাকলে, অথবা ভ্রমণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিলে, এমনকি ভিসার মেয়াদ সামান্য সময় বেশি হলেও, গ্রেপ্তার, আটক ও ফেরত পাঠানো হতে পারে।
এই মুহূর্তে, যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ বিষয়ক পরামর্শ হালনাগাদ করা দেশগুলোর মধ্যে বেলজিয়াম, কানাডা, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে এবং পর্তুগালও রয়েছে।
এই সতর্কতাগুলো মূলত ইউরোপীয় নাগরিকদের জন্য জারি করা হলেও, বাংলাদেশী ভ্রমণকারীদের জন্যও এই তথ্যগুলো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। বিশেষ করে, যারা শিক্ষা, ব্যবসা অথবা পর্যটনের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান, তাদের ভিসা আবেদন এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বিষয়ক বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত থাকা উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য, আপনারা ঢাকার মার্কিন দূতাবাস অথবা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম