অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে, সস্তা আমিষ হিসেবে শামুকের দিকে ঝুঁকছে তিউনিসিয়ার মানুষ।
তিউনিসিয়ার বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম যখন আকাশছোঁয়া, তখন দেশটির সাধারণ মানুষের আমিষের চাহিদা মেটাতে নতুন দিগন্ত দেখা যাচ্ছে। এখানকার তরুণ এবং কম আয়ের মানুষেরা এখন তাদের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করছেন শামুক।
এটি একদিকে যেমন আমিষের চাহিদা পূরণ করছে, তেমনই তাদের জন্য একটি আয়ের পথও খুলে দিয়েছে। খবর অনুযায়ী, দেশটির বেকার তরুণরা এখন শামুক সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করছেন।
আকোদা গ্রামের ২৯ বছর বয়সী শামুক বিক্রেতা করিম জানান, “শামুক লাভজনক, উপকারী এবং এর চাহিদা বেশ ভালো।” গত বছর প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, তিউনিসিয়ায় ৭ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে শামুকের ব্যবহার রয়েছে।
বর্তমানে, পশ্চিমা বিশ্বে এটি একটি বিশেষ খাবারের অংশ হলেও, তিউনিসিয়ায় এটি গরুর মাংসের বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
দেশটিতে ৪০ শতাংশের বেশি যুবক বেকার এবং মূল্যস্ফীতিও অনেক বেশি। এমন পরিস্থিতিতে শামুক যেন অনেকের কাছে এক নতুন আশ্রয়।
কম ফ্যাটযুক্ত এবং প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় শামুক একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে, তেমনি অর্থনৈতিক স্বস্তিও এনে দেয়।
আকোদা বাজারের এক ক্রেতা মোহাম্মদের ভাষ্যমতে, “মাংস বা মুরগির তুলনায় শামুক রান্নার জন্য ভালো। যেখানে এক কেজি গরুর মাংসের দাম প্রায় ২ হাজার টাকার মতো, সেখানে এক বাটি শামুকের দাম প্রায় ১৮০ টাকা।”
মাংস ও মুরগির দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায়, তিউনিসিয়ার মানুষ এখন আমিষের জন্য সাশ্রয়ী বিকল্প খুঁজছেন। শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকেই নয়, পরিবেশগত কারণেও এই বিকল্প খাদ্য উৎসগুলোর প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, শামুক চাষ করলে কার্বন নিঃসরণ অনেক কম হয় এবং প্রথাগত পশুপালনের মতো বনভূমি ধ্বংসের ঝুঁকিও থাকে না।
রাজধানী তিউনিসের একটি রেস্তোরাঁর মালিক ওয়াহিবা ড্রিডি, ঐতিহ্যবাহী উপায়ে মরিচ ও মশলা দিয়ে শামুক রান্না করেন। তিনি জানান, এবারের রমজানে শামুকের বেশ চাহিদা ছিল।
যদিও তিউনিসিয়ার মুসলমানরা সাধারণত ইফতারের সময় গরুর মাংস খেয়ে থাকেন, তবুও এক কেজি শামুকের দাম যেখানে প্রায় ৯০০ টাকার মতো, সেখানে গরুর মাংসের দাম পড়ে প্রায় ১,৯০০ টাকার বেশি।
ওয়াহিবা ড্রিডি আরও বলেন, “যদি সবাই শামুকের উপকারিতা সম্পর্কে জানত, তবে তারা সারা বছর এটি খেত।”
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস