মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করায় বিশ্বজুড়ে একটি অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উভয় দেশই একে অপরের পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করায় আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের পণ্যের উপর ৫৪ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও যুক্তরাষ্ট্রের থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে।
এই পদক্ষেপের ফলে বিশ্ব অর্থনীতির দুই প্রধান চালিকাশক্তির মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলস্বরূপ, বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের ঘোষণার পর থেকে বিশ্ব বাজারের প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের শেয়ার বাজার সূচক, এফটিএসই-১০০, সোমবারের তুলনায় ৭ শতাংশের বেশি কমেছে, যা ফেব্রুয়ারি ২০২০ এর পর থেকে সবচেয়ে বড় পতন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সতর্ক করে বলেছে যে এই বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। আইএমএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেছেন, শুল্ক বৃদ্ধি “অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি”।
ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েলও বলেছেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে “উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ধীর প্রবৃদ্ধি” হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের পর ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, তারা ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে যুক্তরাজ্যের রপ্তানির উপর আরোপিত ১০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করা যায়।
এই প্রসঙ্গে, ব্রিটেনের পক্ষ থেকে কিছু ছাড় দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন যে শুল্ক বৃদ্ধির ফলে পণ্যের দাম বাড়বে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের চাহিদা কমিয়ে দেবে এবং বিশ্বজুড়ে রপ্তানি-নির্ভর অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে মন্দা আরও বাড়তে পারে। জেপি মরগান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক এর মতে, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা আসার সম্ভাবনা ৬০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগে ৪০ শতাংশ ছিল।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল অবস্থার কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এছাড়া, বৈশ্বিক মন্দা দেখা দিলে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে এবং বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে প্রস্তুতি নিতে হবে।
বাণিজ্য সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখতে এবং অর্থনীতির ক্ষতি কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান