মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা একটি ইঁদুরের মস্তিষ্কের সবচেয়ে বিস্তারিত সার্কিট ডায়াগ্রাম তৈরি করেছেন। মানুষের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে, তা বোঝার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এই গবেষণায়, বিজ্ঞানীরা একটি ছোট অঞ্চলের, যা বালুকণার চেয়েও ছোট, মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের (visual cortex) ৮৪,০০০ নিউরনের সংযোগ স্থাপন করেছেন। এই নিউরনগুলো প্রায় ৫০০ মিলিয়ন সিনাপ্স এবং ৫.৪ কিলোমিটার নিউরোনাল তারের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত।
এই ত্রিমাত্রিক চিত্র মস্তিষ্কের গঠন এবং বিভিন্ন কোষ কীভাবে একসাথে কাজ করে, তা বুঝতে সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে আলঝাইমার্স, পারকিনসনস, অটিজম এবং সিজোফ্রেনিয়ার মতো স্নায়বিক রোগগুলো সম্পর্কে ধারণা পেতে এবং তাদের চিকিৎসার পথ খুঁজে বের করতে সাহায্য করতে পারে।
গবেষণাটি পরিচালনা করেন টেক্সাসের বেয়লার কলেজ অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীরা। তারা বিশেষ মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে ইঁদুরটিকে বিভিন্ন চলচ্চিত্র এবং ইউটিউব ক্লিপ দেখিয়ে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ রেকর্ড করেন।
এরপর, অ্যালেন ইনস্টিটিউটের গবেষকরা মস্তিষ্কের ওই একই ঘন মিলিমিটার অংশকে ২৫,০০০ এর বেশি স্তরে ভাগ করেন, প্রতিটি স্তর মানুষের চুলের এক-চতুর্থাংশের সমান। তারা ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে প্রতিটি স্তরের উচ্চ- রেজোলিউশনের ছবি তোলেন।
সবশেষে, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির একটি দল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Artificial Intelligence) এবং মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে কোষ এবং সংযোগগুলোর ত্রিমাত্রিক চিত্র তৈরি করে। এই বিশাল ডেটা সেটের আকার ১.৬ পেটাবাইট, যা প্রায় ২২ বছরের একটানা এইচডি ভিডিওর সমান।
এই গবেষণায় মস্তিষ্কের নতুন কোষের ধরন এবং প্রতিরোধমূলক কোষ (inhibitory cells) সম্পর্কে নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা আগে মনে করতেন, এই কোষগুলো কেবল অন্যান্য কোষের কার্যকলাপ কমিয়ে দেয়।
কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, এই কোষগুলো খুব নির্দিষ্টভাবে কিছু কোষকে লক্ষ্য করে কাজ করে, যা মস্তিষ্কের মধ্যে সমন্বিত যোগাযোগের একটি নতুন পদ্ধতি তৈরি করে।
আমরা মস্তিষ্কের এই অংশের একটি গুগল ম্যাপ বা ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করছি। ভবিষ্যতে, আমরা সুস্থ ইঁদুরের মস্তিষ্কের গঠন এবং রোগের মডেল তৈরি করা ইঁদুরের মস্তিষ্কের গঠনের মধ্যে তুলনা করতে পারব।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই গবেষণার মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং গঠন ভালোভাবে বোঝা যাবে, যা স্নায়বিক রোগগুলোর চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
*নেচার* জার্নালে প্রকাশিত একাধিক গবেষণাপত্রে এই ফলাফলগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান