যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে বসবাস করা এক ব্যক্তিকে ভুল করে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়া নামের ওই ব্যক্তির স্ত্রী জেনিফার ভাসকুয়েজ সুরা স্বামীর প্রত্যাবর্তনের জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছেন।
জানা গেছে, অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার বৈধ অনুমতি ছিল। এমনকি, গ্যাংয়ের হুমকির কারণে তাকে এল সালভাদরে ফেরত না পাঠানোর জন্য আদালতের রায়ও ছিল। কিন্তু, তারপরও তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার আইনজীবী জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য হওয়ার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কোনো প্রমাণ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস অবশ্য বলছে, অ্যাব্রেগো গার্সিয়া এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য।
কারণ হিসেবে তারা জানাচ্ছে, অ্যাব্রেগো গার্সিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন, তাই দেশটির আদালতের এ বিষয়ে এখতিয়ার নেই।
এই ঘটনার পর জেনিফার ভাসকুয়েজ সুরা এক জনসভায় তাঁর স্বামীর মুক্তির জন্য সকলের সমর্থন চেয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার মতো যেসব স্ত্রী, মা ও শিশুরা এমন নিষ্ঠুর বিচ্ছেদের শিকার হয়েছেন, আমি তাঁদের পাশে আছি।
এই কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, মনে হয় যেন এক অন্তহীন দুঃস্বপ্ন।”
জানা গেছে, অ্যাব্রেগো গার্সিয়া প্রায় এক মাস আগে এল সালভাদরে ফেরত যান এবং সেখানে তাঁকে কারাগারে বন্দী করা হয়েছে। জেনিফার তাঁর স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না।
তিনি বলেন, “আমি যদি পৃথিবীর সব টাকা পেতাম, তাহলে তা দিয়ে একটাই জিনিস কিনতাম—কিলমারের কণ্ঠস্বর শোনার জন্য একটি ফোন কল। কিলমার, তুমি যদি আমার কথা শোনো, তবে শোনো, আমি তোমাকে খুব মিস করি এবং আমাদের সন্তানদের জন্য আমি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।”
কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়া ২০১১ সালের দিকে এল সালভাদর ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। কারণ, স্থানীয় গ্যাংয়ের সদস্যরা তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে হত্যার হুমকি দিচ্ছিল।
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ইমিগ্রেশন আদালত রায় দেয় যে, গ্যাংয়ের হুমকির কারণে অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো যাবে না। এর কিছুদিন পরেই তিনি জেনিফার ভাসকুয়েজ সুরাকে বিয়ে করেন।
তাঁদের একটি সন্তানও রয়েছে এবং জেনিফারের আগের পক্ষের আরও দুটি সন্তান আছে।
বর্তমানে, অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে ফিরিয়ে আনার জন্য মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের গ্রিনবেল্টে একটি আদালতে শুনানি চলছে। সেখানে তাঁর আইনজীবীরা ফেডারেল আদালতের কাছে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার আবেদন জানাবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনা অনেককে ক্ষুব্ধ করেছে। বিশেষ করে, যারা যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি পেয়েছেন, তাঁদের বিতাড়িত করার বিষয়টি নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, কোনো মানুষকে তাঁর নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হলে, সেখানকার পরিস্থিতি যদি তাঁর জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তাহলে তা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান