মহিলাদের মধ্যে এন্ডোমেট্রিওসিস রোগের কষ্ট কমাতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে একটি নতুন গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এই গবেষণায় খাদ্য তালিকা থেকে কিছু খাবার বাদ দেওয়ার ফলে অনেক রোগীর ব্যথা কমেছে বলে জানা গেছে।
এন্ডোমেট্রিওসিস হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে জরায়ুর ভেতরের আস্তরণের মতো কোষ শরীরের অন্যান্য অংশে, যেমন ডিম্বাশয়, ফেলোপিয়ান টিউব এবং এমনকি অন্ত্রের মতো স্থানে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এর ফলে তীব্র ব্যথা, অনিয়মিত ঋতুস্রাব এবং সন্তান ধারণে সমস্যা হতে পারে। যুক্তরাজ্যে প্রজননক্ষম প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে ১ জন এই রোগে আক্রান্ত হন।
এডিনবারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় ২,৫৯৯ জন নারীর খাদ্যাভ্যাস এবং তাদের এন্ডোমেট্রিওসিসের উপসর্গগুলোর মধ্যে সম্পর্ক অনুসন্ধান করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা খাদ্য তালিকা থেকে গ্লুটেন (যেমন, গম, বার্লি) এবং দুগ্ধজাত খাবার (যেমন, দুধ, পনির) ত্যাগ করেছেন, তাদের প্রায় ৪৫ শতাংশের ব্যথা কমেছে।
কফি বা ক্যাফিন গ্রহণ কমিয়েছেন এমন নারীদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ এবং অ্যালকোহল ত্যাগ করেছেন এমন নারীদের মধ্যে ৫৩ শতাংশের ব্যথা কমেছে। এছাড়াও, প্রক্রিয়াজাত খাবার (যেমন, রেডি-মিল, আইসক্রিম, মিষ্টি) বাদ দেওয়ার ফলে প্রায় ৪০ শতাংশ রোগীর ব্যথা কমেছে।
রসুন ও পেঁয়াজ ত্যাগ করার ফলে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারীর “এন্ডো-বেলি” বা পেট ফোলাভাব কমেছে।
গবেষকরা মনে করেন, খাদ্যতালিকায় পরিবর্তনের ফলে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার পরিবর্তন হয়, যা প্রদাহ কমাতে সহায়ক। এন্ডোমেট্রিওসিসের ব্যথা মূলত শ্রোণী অঞ্চলে অনুভূত হয়, যা মাসিক ঋতুস্রাবের সময় আরও বাড়ে।
তবে এই রোগের কারণে কোমর, স্তন এবং সারা শরীরেও ব্যথা হতে পারে।
গবেষণার প্রধান লেখক, এডিনবারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রান্সেসকা হিয়ার্ন-ইয়েটস বলেন, “এন্ডোমেট্রিওসিসের ব্যথা কমাতে পারে এমন যেকোনো কিছুই নারীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই রোগটি নিয়ে এখনো অনেক গবেষণা বাকি আছে, তবে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া যে উপসর্গগুলোর সঙ্গে জড়িত, সেই প্রমাণ বাড়ছে।
সম্ভবত সে কারণেই অনেক নারী তাদের খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন এনেছেন এবং অনেকের ক্ষেত্রে এর সুফলও পাওয়া গেছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গবেষণার ফলাফল খুবই উৎসাহব্যঞ্জক, তবে খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তনের প্রভাব নিশ্চিত করার জন্য আরও বড় আকারে গবেষণা প্রয়োজন। রোগীদের অবশ্যই কোনো খাদ্য পরিবর্তন করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বাংলাদেশেও এন্ডোমেট্রিওসিসের চিকিৎসায় খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে আরও সচেতনতা তৈরি করা দরকার।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান