প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগের এক নারীর মুখাবয়ব কেমন ছিল? সম্প্রতি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। ব্রোঞ্জ যুগে মাইসেনীয় সভ্যতার (Mycenaean civilization) এক নারীর মুখাবয়ব পুনর্গঠন করা হয়েছে, যিনি ট্রোজান যুদ্ধের বহু আগে এই অঞ্চলে বাস করতেন।
গ্রিক পুরাণে ট্রোজান যুদ্ধের প্রেক্ষাপট পাওয়া যায়, যেখানে হেলেন অফ ট্রয়ের (Helen of Troy) কথা উল্লেখ আছে।
ঐতিহাসিক ও ক্লাসিক্যাল স্টাডিজের অধ্যাপক ড. এমিলি হাউজার (Dr. Emily Hauser)-এর তত্ত্বাবধানে এই পুনর্গঠন কাজটি করা হয়েছে। তিনি জানান, “ঐ নারীর মুখাবয়ব দেখলে যেন শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে।
হেলেনের বোন, ক্লাইটেমনেস্ট্রা (Clytemnestra)-র রাজ্যের একজন নারীর মুখচ্ছবি দেখা যেন এক দারুণ অভিজ্ঞতা।”
জানা যায়, এই নারীর দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল গ্রিক ভূখণ্ডের মাইসেনিতে, যা একসময়ে হোমারে বর্ণিত রাজা আগামেমননের (King Agamemnon) রাজ্য ছিল।
১৯৫০-এর দশকে এখানে একটি রাজকীয় সমাধিক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। সেখানেই পাওয়া গিয়েছিল এই নারীর কঙ্কাল।
তাঁর সঙ্গে পাওয়া গিয়েছিল মূল্যবান অলঙ্কার, অস্ত্রশস্ত্র এবং একটি সোনার মুখোস।
আগে ধারণা করা হতো, সমাধিস্থলে পুরুষের পাশে থাকা নারী হয়তো তাঁর স্ত্রী। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষার পর জানা গেছে, তাঁরা ভাই-বোন ছিলেন।
গবেষকরা মনে করেন, নারীর মৃত্যুর কারণ ছিল তাঁর জন্মগত সম্মান ও সামাজিক অবস্থান। ব্রোঞ্জ যুগের সমাধিস্থলে নারীদের সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্রের উপস্থিতি, সেই সময়ের নারীদের যুদ্ধ এবং সমাজে তাঁদের ভূমিকা সম্পর্কে নতুন ধারণা দেয়।
পুনর্গঠনের কাজটি করেছেন ডিজিটাল শিল্পী জুয়ানজো ওর্টেগা জি (Juanjo Ortega G)। ১৯৮০-এর দশকে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করা একটি মাটির মডেলের ওপর ভিত্তি করে এই ডিজিটাল পুনর্গঠন করা হয়েছে।
নারীর কঙ্কালের হাড়ের অবস্থা বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, তিনি সম্ভবত বাতের (arthritis) সমস্যায় ভুগতেন। সম্ভবত তিনি বুনন কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
প্রাচীন ইতিহাসে নারীদের সম্পর্কে নতুন তথ্য জানতে প্রত্নতত্ত্ব এবং ডিএনএ বিশ্লেষণ নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
এই পুনর্গঠন শুধু একটি মুখচ্ছবি তৈরি করেনি, বরং আমাদের অতীতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। এর মাধ্যমে ব্রোঞ্জ যুগের নারীদের জীবনযাত্রা, তাঁদের সামাজিক অবস্থান এবং সেই সময়ের সংস্কৃতি সম্পর্কে নতুন ধারণা পাওয়া যায়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান