নাসভিলে ভয়াবহ স্কুল শুটিং: দীর্ঘ পরিকল্পনার সাক্ষী, উন্মোচন হলো ঘাতকের মানসিক জগৎ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসী অঙ্গরাজ্যের নাসভিলে শহরের একটি স্কুলে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বন্দুক হামলার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এই রিপোর্টে উঠে এসেছে ঘাতক অড্রে হেলের নৃশংসতা এবং ঘটনার দীর্ঘ প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার বিস্তারিত চিত্র।
২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত, এই গণহত্যার নীলনকশা তৈরি করা হয়, যা ছিল আত্মঘাতী মানসিকতার চরম বহিঃপ্রকাশ।
২০২৩ সালের ২৭শে মার্চ, স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে, ২৮ বছর বয়সী অড্রে হেল, একটি প্রাইভেট স্কুলে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালায়। এই হামলায় তিনজন ৯ বছর বয়সী শিশু এবং তিনজন শিক্ষক নিহত হয়।
তদন্তকারীরা বলছেন, হেলের মূল উদ্দেশ্য ছিল খ্যাতি অর্জন করা এবং এর জন্য সে বেছে নিয়েছিল শিশুদের হত্যা করার মতো নৃশংস পথ।
তদন্তে জানা যায়, অড্রে হেল দীর্ঘদিন ধরে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিল। সে তার বাবা-মা এবং থেরাপিস্টদের কাছ থেকে তথ্য গোপন করে যেত। এমনকি, সে কিভাবে এই হামলা চালাবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করেছিল।
হামলার আগে, সে অনলাইনে বন্দুক কেনে এবং সেগুলোকে লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করে।
তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, অড্রে হেলের মধ্যে অন্যদের প্রভাবিত করার এক বিশেষ ক্ষমতা ছিল। সে তার দুর্বলতাগুলো গোপন রাখতে পারদর্শী ছিল এবং নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যথেষ্ট সতর্ক ছিল।
সে সবসময় চেষ্টা করত, যেন তার বাবা-মা বা থেরাপিস্টরা তার আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে না পারে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, অড্রে হেলের মধ্যে প্রতিশোধের একটা তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল। সে তার জীবনের ব্যর্থতা এবং একাকিত্বের জন্য অন্যদের দায়ী করত।
এই কারণে, সে কলম্বাইন হাই স্কুল গণহত্যার ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শিশুদের হত্যার পরিকল্পনা করে।
হেলের লেখা বিভিন্ন ডায়েরি ও অন্যান্য নথিপত্র থেকে জানা যায়, শৈশবকাল থেকেই সে মানসিক উদ্বেগে ভুগত। স্কুলের পরিবেশ, কোলাহল এবং অপরিচিত মানুষের উপস্থিতি তাকে ভীত করত।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, তার মানসিক স্বাস্থ্য আরও খারাপ হতে থাকে। হতাশা, আত্মহত্যার প্রবণতা এবং সমাজের প্রতি বিদ্বেষ—এসব তার মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, অড্রে হেলের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসা চলছিল, কিন্তু সে চিকিৎসার নিয়ম মানতে রাজি ছিল না। এমনকি, সে তার থেরাপিস্টদের কাছ থেকেও তথ্য গোপন করত।
নাসভিলের এই ঘটনার পর, ভুক্তভোগীদের পরিবারগুলো তাদের শোক প্রকাশ করেছে এবং এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
নিহত শিশুদের পরিবারের সদস্যরা এই ঘটনার বিচার চেয়েছেন এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন।
এই ঘটনার পর, হেলের লেখাগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করার বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগীদের পরিবারগুলো মনে করে, এই লেখাগুলো প্রকাশ করা হলে, তা আরও বেশি ট্রমা তৈরি করবে এবং অন্যদের অনুরূপ অপরাধ করতে উৎসাহিত করতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হলে, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য কাজ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন