আজকাল তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়ার প্রবণতা কিছুটা কম দেখা যাচ্ছে। উন্নত বিশ্বে, বিশেষ করে আমেরিকাতে, কিশোর ও তরুণদের মধ্যে এই পরিবর্তনটি বিশেষভাবে নজরে আসছে। অনেক অভিভাবক এই পরিবর্তনের কারণ জানতে আগ্রহী হচ্ছেন।
সম্প্রতি একটি গবেষণা জানাচ্ছে, অনেক টিনএজার দেরিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিচ্ছেন। কেউ কেউ এক-দুই বছর, আবার কেউ কেউ দুই বছরের বেশি সময় পর্যন্ত লাইসেন্স নেওয়ার প্রক্রিয়াটি পিছিয়ে দিচ্ছেন।
আগে সাধারণত দেখা যেত, তরুণ বয়সীরা ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকত। কারণ, এটি তাদের স্বাধীনতা ও আত্মনির্ভরশীলতার প্রতীক ছিল। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি ভিন্ন। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে।
প্রথমত, প্রযুক্তি ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন। এখন রাইড শেয়ারিং অ্যাপ (যেমন – Uber, Lyft) -এর সহজলভ্যতা বেড়ে যাওয়ায় তরুণদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে আর বাবা-মায়ের উপর বা ব্যক্তিগত গাড়ির উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না।
স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, আড্ডা দেওয়া আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। ফলে, বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য বা ঘোরাঘুরির জন্য বাড়ির বাইরে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তাও কমেছে।
দ্বিতীয়ত, পড়াশোনার চাপ। আজকের দিনের ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেক বেশি প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। ভালো ফল করার জন্য তাদের অতিরিক্ত চেষ্টা করতে হয়।
ভালো গ্রেড পাওয়াটা এখন তাদের কাছে অনেক বড় উদ্বেগের বিষয়। এছাড়াও, খেলাধুলা এবং অন্যান্য সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের কারণেও তাদের হাতে সময়ের অভাব দেখা যায়।
অর্থনৈতিক বিষয়ও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। অনেক পরিবারে বাবা-মা’কে সংসারের খরচ চালানোর জন্য বেশি সময় কাজ করতে হয়। ফলে সন্তানদের ড্রাইভিং শেখানোর মতো পর্যাপ্ত সময় তাদের হাতে থাকে না।
মানসিক স্বাস্থ্যও একটি বড় বিষয়। বর্তমানে কিশোর ও তরুণদের মধ্যে উদ্বেগ, হতাশা ও মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলো ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে বিলম্ব ঘটায়।
বিষণ্ণতায় আক্রান্ত তরুণদের শক্তি ও মনোযোগের অভাব থাকে। ফলে তারা সহজে কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারে না এবং তাদের লক্ষ্য অর্জনেও সমস্যা হয়। উদ্বেগে ভোগা কিশোর-কিশোরীরা তাদের ভবিষ্যৎ এবং স্বাধীনতা নিয়ে অনেক সময় ভীত থাকে, তাই তারা এমন কিছু করতে চায় না যা তাদের স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেরিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়ার কিছু খারাপ দিকও রয়েছে। গাড়ি চালানো শেখা জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিজেদের প্রয়োজনীয় কাজ, যেমন – বন্ধুদের সাথে দেখা করা, খেলাধুলা বা অন্য কোনো শখের ক্লাসে যাওয়া অথবা স্বাস্থ্য বিষয়ক অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য এখন আর বাবা-মায়ের উপর নির্ভর করতে হয় না, যা তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলে।
দেরিতে ড্রাইভিং শেখা শুরু করলে এই সুযোগগুলো কমে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। প্রথমে একটি শিক্ষানবিশ লাইসেন্স (permit) নিতে হয় এবং একজন প্রাপ্তবয়স্কের তত্ত্বাবধানে গাড়ি চালাতে হয়।
পরে, লাইসেন্স পাওয়ার পরও কিছু বিধি-নিষেধ থাকে। যেমন – রাতে গাড়ি চালানো বা গাড়িতে কতজন যাত্রী নিতে পারবে, তার সীমাবদ্ধতা থাকে। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় লাইসেন্স নিলে এই সুযোগগুলো পাওয়া যায় না।
তাহলে, অভিভাবকদের কী করা উচিত?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানের মানসিক পরিপক্কতা এবং আগ্রহের দিকে খেয়াল রাখা। তাদের কি ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়ার মতো মানসিকতা তৈরি হয়েছে? তারা কি দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত?
এছাড়াও, সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো সমস্যা থাকলে, দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সুতরাং, অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা এবং তাদের স্বাধীনতা ও বিকাশে সহায়তা করা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন