জার্মানিতে পরিচালিত একটি গবেষণা কর্মীর জীবনযাত্রায় মৌলিক আয়ের প্রভাব নিয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
‘মাইন গ্রুন্ডাইংকোমেন’ নামের একটি অলাভজনক সংস্থা বার্লিনে এই পরীক্ষাটি পরিচালনা করে।
তারা ১২২ জন মানুষের উপর তিন বছর ধরে, জুন ২০২১ থেকে মে ২০২৪ পর্যন্ত এই পরীক্ষাটি চালায়।
এই সময়ের মধ্যে, অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেককে প্রতি মাসে ১,২০০ ইউরো (বর্তমান বিনিময় হারে যা প্রায় ১,৪৫,০০০ টাকার সমান) করে প্রদান করা হয়।
গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল, এই নিয়মিত আয় কর্মীদের কর্মজীবনে কেমন প্রভাব ফেলে তা পর্যবেক্ষণ করা।
প্রচলিত ধারণা হলো, বিনামূল্যে অর্থ পেলে মানুষ কাজ করতে উৎসাহ হারায়।
কিন্তু এই গবেষণায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীরা নিয়মিত এই অর্থ পাওয়ার পরও তাদের কর্মজীবনে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
তারা আগের মতোই সপ্তাহে গড়ে ৪০ ঘণ্টা কাজ করেছেন।
এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের বয়স ছিল ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং তাদের মাসিক আয় ছিল ১,১০০ থেকে ২,৬০০ ইউরোর মধ্যে।
গবেষণার শর্ত ছিল, অংশগ্রহণকারীদের প্রতি ছয় মাস অন্তর জীবনযাত্রার বিভিন্ন দিক নিয়ে একটি প্রশ্নপত্র পূরণ করতে হতো।
এর মধ্যে তাদের আর্থিক অবস্থা, কাজের ধরন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সম্পর্ক সম্পর্কিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গবেষণার ফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দেখা গেছে, নিয়মিত আয় পাওয়ার ফলে অংশগ্রহণকারীরা তাদের কাজের প্রতি আরও বেশি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
তারা তাদের জীবনকে আগের চেয়ে মূল্যবান এবং অর্থপূর্ণ মনে করেছেন।
এমনকি, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের নর্থumbria ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ম্যাথিউ জনসন এই ফলাফলকে ‘আশ্চর্যজনক নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি আরও যোগ করেন, এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, মৌলিক আয় কর্মীদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেয় এবং তারা তাদের কর্মজীবনে ভালো ঝুঁকি নিতে ও খারাপ পরিস্থিতি এড়াতে সক্ষম হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত আয় পাচ্ছিলেন, তারা নতুন চাকরি খুঁজে নিতে অথবা উচ্চশিক্ষার জন্য নাম লেখাতেও বেশি আগ্রহী ছিলেন।
এর কারণ হতে পারে, তাদের আর্থিক নিরাপত্তা বেড়ে যাওয়ায় তারা জীবনের ঝুঁকিগুলো নিতে আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছিলেন।
নারীদের মধ্যে এই স্বাধীনতা ছিল আরও বেশি, কারণ তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনে আরও বেশি স্বায়ত্তশাসন অনুভব করেছেন।
অধ্যাপক জনসনের সহযোগী, নর্থumbria ইউনিভার্সিটির আরেক গবেষক, এলিয়ট জনসন বলেন, এই গবেষণা প্রমাণ করে, কেন মানুষের জন্য শর্তহীন সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি বিশেষভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তিনি আরও যোগ করেন, সরকারগুলোর উচিত এটিকে দীর্ঘমেয়াদী জনস্বাস্থ্য বিনিয়োগ হিসেবে দেখা।
এই গবেষণার জন্য অর্থ এসেছিল ব্যক্তিগত দাতাদের কাছ থেকে।
প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ এই গবেষণায় অংশ নিতে চেয়েছিল।
‘মাইন গ্রুন্ডাইংকোমেন’ সংস্থাটি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে মৌলিক আয়ের ধারণা নিয়ে কাজ করছে।
তারা মনে করে, এই ধারণাটি নিয়ে আলোচনা ও পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যাগত পরিবর্তন এবং প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে সামাজিক নিরাপত্তা এবং সার্বজনীন মৌলিক আয়ের ধারণা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
জার্মানির এই গবেষণা সেই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন