যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগ (HHS) ধূমপান ত্যাগের উদ্দেশ্যে পরিচালিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের অর্থায়ন হ্রাস করেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশটির জনস্বাস্থ্যখাতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এই পদক্ষেপের কারণ, সম্ভাব্য প্রভাব এবং বাংলাদেশের জন্য এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সরকারি পর্যায়ে এর জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ করা হয়েছে। এর ফলস্বরূপ ধূমপানের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
তবে, সম্প্রতি HHS-এর নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তের কারণে এই সাফল্যের ধারা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে কাটছাঁটের কারণে, বিশেষ করে যারা ধূমপান ত্যাগ করতে চান তাদের জন্য উপলব্ধ সুযোগগুলো কমে যেতে পারে।
HHS-এর এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC)-এর অধীনস্থ অফিস অন স্মোকিং অ্যান্ড হেলথ (OSH)। এই সংস্থাটি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া, ওএসএইচ জাতীয় ও রাজ্য পর্যায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের জন্য অর্থ সরবরাহ করে থাকে। এই কার্যক্রমগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে ধূমপানের হার বাড়ার এবং তামাক-সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসায় বাড়তি অর্থ খরচ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধূমপান ত্যাগের জন্য সহজলভ্য এবং বিনামূল্যে সহায়তা প্রদানকারী কুইটলাইন প্রোগ্রামগুলির (Quitline) উপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
কুইটলাইনগুলি মূলত ফোন কল, টেক্সট মেসেজ বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ধূমপান ত্যাগ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের কাউন্সেলিং ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকে। নর্থ আমেরিকান কুইটলাইন কনসোর্টিয়ামের (NAQC) তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে কুইটলাইনগুলি প্রায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজার মানুষকে ধূমপান ত্যাগ করতে সাহায্য করেছে।
কুইটলাইন প্রোগ্রামগুলি ধূমপান ত্যাগের ক্ষেত্রে প্রায় ৩৫ শতাংশ সাফল্য এনেছে, যেখানে কোনো সাহায্য ছাড়া ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করা ব্যক্তিদের মধ্যে সাফল্যের হার মাত্র ৭ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে কুইটলাইনগুলি সাধারণত রাজ্য সরকার এবং ফেডারেল সরকারের যৌথ অর্থায়নে পরিচালিত হয়। ফেডারেল সরকারের তহবিল কমে গেলে, কুইটলাইনগুলি তাদের পরিষেবা কমাতে বা বন্ধ করতে বাধ্য হতে পারে।
এর ফলে, ধূমপান ত্যাগের সুযোগ কমে যাবে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা বাড়তে পারে। কারণ, কুইটলাইনগুলি তরুণদের জন্য বিশেষ সহায়তা প্রদান করে থাকে।
এছাড়াও, যারা স্বাস্থ্য বীমার ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য ধূমপান-সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৫ বছরে ধূমপানের হার ২৩.৫ শতাংশ থেকে ১১.৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
তবে, সরকারি সহায়তা হ্রাস পেলে এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা বিষয়টি বিবেচনা করি, তাহলে ধূমপান একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের হার অনেক বেশি এবং এর কারণে প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়।
তাই, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি যে, তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের জন্য সরকারি সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশেও কুইটলাইনের মতো সহায়তা কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন, যাতে ধূমপান ত্যাগে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ তৈরি করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায়, তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ করা অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন।