যুক্তরাষ্ট্রের এক নারীর শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করে চার মাসের বেশি সময় ধরে সেটি কার্যকর রাখা সম্ভব হয়েছে, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সম্প্রতি, ৫৩ বছর বয়সী টাওয়ানা লুনি নামের একজন নারীর শরীরে এই প্রতিস্থাপিত কিডনিটি অপসারণ করা হয়।
টাওয়ানা লুনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি বিকল হয়ে ডায়ালাইসিসের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। ২০১৯ সাল থেকে তিনি নিয়মিত ডায়ালাইসিস করাচ্ছিলেন।
মানবদেহে শূকরের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ধারণাটি নতুন নয়, তবে এমন সাফল্যের নজির এটাই প্রথম। এই ধরনের প্রতিস্থাপনকে জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন (xenotransplantation) বলা হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নভেম্বরের শেষে এই প্রতিস্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমে লুনি ১৩০ দিন ডায়ালাইসিস ছাড়াই সুস্থ জীবন যাপন করেছেন।
যদিও অস্ত্রোপচারের পর তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন, তবে এপ্রিল মাসের শুরুতে তার শরীরে কিছু জটিলতা দেখা দেয়। কিডনির কার্যকারিতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
চিকিৎসকরা জানান, এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তারা কাজ করছেন। মূলত অন্য একটি সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমানো হয়েছিল, যার ফলে এই জটিলতা দেখা দেয়।
চিকিৎসকরা জানান, লুনি এবং তার পরিবারের সম্মতিক্রমে, কিডনিটি অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারণ অতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগের চেয়ে ডায়ালাইসিসে ফিরে আসাই তার জন্য নিরাপদ ছিল।
এর ফলে ভবিষ্যতে তার অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সম্ভাবনাও বজায় থাকবে।
এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে ‘ইউনাইটেড থেরাপিউটিক্স কর্পোরেশন’ নামের একটি বায়োটেক কোম্পানি। তারাই এই জিনগতভাবে পরিবর্তিত শূকরের কিডনি তৈরি করেছে।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, প্রতিস্থাপনের পর সংক্রমণের ঝুঁকি এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখাটা সবচেয়ে কঠিন ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় ৯০ হাজারের বেশি মানুষ কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষা করছেন। সাধারণত, একটি কিডনি পাওয়ার জন্য রোগীদের তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
অনেক সময় অঙ্গের অভাবে প্রতি বছর বহু রোগীর মৃত্যু হয়। ডায়ালাইসিস জীবন বাঁচানোর একটি উপায় হলেও, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, শূকরের অঙ্গ মানুষের শরীরের জন্য উপযোগী, কারণ শূকরের অঙ্গের গঠন মানুষের অঙ্গের মতোই। তাছাড়া, শূকর দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে, যা অঙ্গ সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে।
বিজ্ঞানীরা শূকরের জিন পরিবর্তন করে মানবদেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করছেন।
ডা. রবার্ট মন্টগোমারি জানিয়েছেন, টাওয়ানার এই সাহসীকতা চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তার এই ১৩০ দিনের অভিজ্ঞতা থেকে বিজ্ঞানীরা অনেক কিছু শিখেছেন, যা ভবিষ্যতে জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারিং করা শূকরের অঙ্গকে মানবদেহে প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে।
আশা করা হচ্ছে, আগামী এক দশকের মধ্যে এই পদ্ধতি সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন