দীর্ঘদিনের ব্যথায় জর্জরিত? অনেক পরীক্ষার পরেও কি কোনো সমাধান খুঁজে পাননি? তাহলে হয়তো আপনার শরীরের কষ্টের আসল চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে আপনার মনেই।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা গেছে, মন ও শরীরের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং মানসিক চাপ থেকে সৃষ্ট কিছু শারীরিক কষ্টের উপশম সম্ভব মন-ভিত্তিক চিকিৎসার মাধ্যমে।
আজকের দিনে, সারা বিশ্বে দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক যন্ত্রণা একটি গুরুতর সমস্যা। উন্নত দেশগুলোতে এর চিকিৎসা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ বিপুল।
প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক সময় এই সমস্যার সমাধানে পুরোপুরি সফল হয় না। এক্ষেত্রে, মন ও শরীরের আন্তঃসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে কিভাবে দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, সেই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন মনোবিজ্ঞানী ও লেখক নিকোল স্যাকস।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে মন-ভিত্তিক চিকিৎসার ওপর কাজ করছেন। তাঁর মতে, অনেক সময় শারীরিক কষ্টের কারণটা আসলে লুকিয়ে থাকে আমাদের মনের গভীরে, যেখানে জমে থাকা দুঃখ, রাগ, হতাশা এবং উদ্বেগের মতো অনুভূতিগুলো শরীরের মধ্যে বিভিন্ন সংকেত তৈরি করে।
নিকোল স্যাকস-এর মতে, মন-শরীরের এই জটিল সম্পর্কটিকে বুঝতে পারলে, দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাঁর মতে, এই পদ্ধতির মূল ভিত্তি হল তিনটি বিষয়: প্রথমত, মানুষের শরীর ও মনের মধ্যেকার সম্পর্ক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা।
দ্বিতীয়ত, জার্নালস্পিক নামক একটি বিশেষ লেখার পদ্ধতি ব্যবহার করা, যা মনের গভীরে জমে থাকা অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে সাহায্য করে। এবং সবশেষে, নিজের প্রতি সহানুভূতি রাখা ও ধৈর্য ধারণ করা।
জার্নালস্পিক আসলে কী? এটি হল একটি বিশেষ ধরনের লেখার পদ্ধতি, যেখানে একজন ব্যক্তি কোনো রকম বাধা ছাড়াই, নিজের ভেতরের কথাগুলো, রাগ, দুঃখ অথবা উদ্বেগকে কোনো বিচার-বিবেচনা ছাড়াই লিখে প্রকাশ করেন।
এই লেখার মাধ্যমে, মনের মধ্যে জমে থাকা কষ্টগুলো ধীরে ধীরে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং শরীরের উপর এর খারাপ প্রভাব কমে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দীর্ঘমেয়াদী ব্যাক পেইন বা কোমর ব্যথায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে মন-ভিত্তিক চিকিৎসার প্রয়োগে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষক ড. মাইকেল ডনিনো-এর নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায়, অংশগ্রহণকারীদের তিনটি দলে ভাগ করা হয়। প্রথম দল, তাদের প্রচলিত চিকিৎসা চালিয়ে যান।
দ্বিতীয় দল, আট সপ্তাহের একটি মানসিক চাপ কমানোর কোর্সে অংশ নেন। তৃতীয় দলটি, ড. সার্নোর কাজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে, মন-শরীরের কৌশল ব্যবহার করে তাঁদের মানসিক ইতিহাস অনুসন্ধান করেন।
এই তৃতীয় দলের সদস্যরা অন্যান্য দলের তুলনায় অনেক কম ব্যথা অনুভব করেছেন। ছয় মাস পর, মন-ভিত্তিক চিকিৎসা গ্রহণকারী প্রায় ৬৪% মানুষ জানান যে, তাঁরা সম্পূর্ণরূপে ব্যথা মুক্ত হয়েছেন।
তাহলে, কিভাবে বুঝবেন আপনার শারীরিক কষ্টের কারণ মনস্তাত্ত্বিক? যদি আপনার ব্যথার কোনো সুস্পষ্ট শারীরিক কারণ খুঁজে না পাওয়া যায়, ব্যথা শরীরের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায়, অথবা মানসিক চাপের সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকে, তাহলে সম্ভবত এটি মন-শরীরের সংযোগের ফল।
এক্ষেত্রে, একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং চিকিৎসার অন্যান্য দিকগুলো বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরি।
মনে রাখতে হবে, শরীর আমাদের বন্ধু। এটি সবসময় আমাদের রক্ষা করতে চায়। তাই, শরীরের সংকেতগুলো শোনা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়াটা জরুরি।
আপনি যদি দীর্ঘস্থায়ী কোনো শারীরিক কষ্ট অনুভব করেন, তাহলে মন-ভিত্তিক চিকিৎসার মাধ্যমে এর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে পারেন। নিজের প্রতি সহানুভূতি রেখে, ধৈর্য ধরে এই পথে এগোনো সম্ভব।
যেকোনো শারীরিক কষ্টের সমাধানে, একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন