গাজায় ফিলিস্তিনি ত্রাণকর্মীদের উপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলি: ভিডিও ফুটেজে নিহতদের শেষ মুহূর্তের দৃশ্য
গাজায় গত মাসে ফিলিস্তিনের জরুরি ত্রাণকর্মীদের উপর ইসরায়েলি সেনাদের গুলিবর্ষণের ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, নিহত হওয়া কর্মীদের অ্যাম্বুলেন্স বহর স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা ছিল এবং তারা স্বাভাবিকভাবেই রাস্তায় চলাচল করছিল।
এই ভিডিওটি ইসরায়েলি বাহিনীর দেওয়া তথ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, যেখানে তারা দাবি করেছিল, সন্দেহজনকভাবে এগিয়ে আসায় তাদের উপর গুলি চালানো হয়েছে।
ভিডিওটি, যা একজন নিহত ফিলিস্তিনি প্যারামেডিকের ফোন থেকে পাওয়া গেছে, তাতে এক ডজনের বেশি ত্রাণকর্মীর শেষ মুহূর্তের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) জানিয়েছে, নিহত ১৫ জন অ্যাম্বুলেন্স ও ত্রাণকর্মী ছিলেন।
তাঁদের মরদেহ একটি গণকবরে পাওয়া যায়, যা তাঁদের নিখোঁজ হওয়ার এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পরে আবিষ্কৃত হয়। রাফা এলাকার এই গণকবর থেকে উদ্ধার হওয়া ১৪ জনের মধ্যে ৮ জন পিআরসিএস-এর, ৫ জন সিভিল ডিফেন্সের এবং ১ জন জাতিসংঘের কর্মী ছিলেন।
আন্তর্জাতিক মহলে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সগুলো তাদের আলো ও সতর্ক সংকেত বাতি জ্বালিয়ে রাস্তায় চলছিল।
ঘটনার পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) প্রথমে জানায়, কিছু ‘সন্দেহজনক’ যান কোনো আলো বা জরুরি সংকেত ছাড়াই সেনাদের দিকে এগিয়ে আসছিল, যার ফলস্বরূপ গুলি চালানো হয়।
ভিডিও প্রকাশের পর আইডিএফ জানিয়েছে, তারা ঘটনার তদন্ত করছে। তারা আরও জানায়, ঘটনার সম্পূর্ণ চিত্র বুঝতে সব ধরনের প্রমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি অ্যাম্বুলেন্স রাস্তার পাশে থামার পর কনভয়টিও থেমে যায়। পিআরসিএস জানিয়েছে, এই অ্যাম্বুলেন্সটি আহত বেসামরিক নাগরিকদের সাহায্য করতে গিয়েছিল।
এরপরই সেখানে তীব্র গুলির শব্দ শোনা যায়। প্যারামেডিক রিফাত রাদওয়ান, যিনি ভিডিওটি ধারণ করছিলেন, শাহাদা পাঠ করতে শোনা যায়। তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, তিনি জানেন তিনি মারা যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘মা, আমাকে ক্ষমা করো, আমি তো মানুষের সাহায্য করতে চেয়েছিলাম’।
ভিডিওতে অন্যদের কণ্ঠও শোনা যায়, যাদের মধ্যে কেউ কেউ হিব্রু ভাষায় চিৎকার করছিলেন। তবে তাঁরা কী বলছিলেন, তা স্পষ্ট নয়।
আইডিএফ ১ এপ্রিল জানায়, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সেনারা হামাসের একজন সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ আমিন ইব্রাহিম শুবাকিকে হত্যা করেছে, যিনি ৭ অক্টোবরের হামলায় অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়াও, আরও ৮ জন হামাস ও ইসলামিক জিহাদের সদস্য নিহত হয়েছে।
তবে, নিহত সন্ত্রাসীদের পরিচয় সম্পর্কে কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি। পিআরসিএস-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহত ১৫ জনের মধ্যে ১৪ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে, কিন্তু তাঁদের মধ্যে মোহাম্মদ শুবাকির নাম নেই।
জাতিসংঘের যে কর্মী নিহত হয়েছেন, তাঁর পরিবারের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁর নাম প্রকাশ করা হয়নি।
আইডিএফ আরও জানায়, সন্ত্রাসীরা প্রায়ই তাদের কার্যক্রমের জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সুবিধা ব্যবহার করে।
এদিকে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, উদ্ধার প্রক্রিয়া সমন্বয় করতে বেশি সময় লাগবে ভেবে সেনাদের মৃতদেহগুলো কবর দেওয়া হয়েছিল।
স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, ২৩ মার্চ তারিখে পিআরসিএস ও সিভিল ডিফেন্সের ৫টি অ্যাম্বুলেন্সকে ঘিরে ইসরায়েলি সামরিক যান দেখা যায়।
২৫ মার্চের ছবিতে একই স্থানে একটি ট্যাংক, একটি খননকারী এবং অন্যান্য সামরিক যান দেখা গেছে। অ্যাম্বুলেন্সগুলোর স্থানে এখন ধ্বংসাবশেষ দেখা যাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন